1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উর্দিধারী পুলিশকর্মীর হাতে তুলি, গড়ছেন দুর্গা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

তার নেশা প্রতিমা তৈরি করা। এবারও বেশ কয়েকটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন পুলিশকর্মী সুকুমার মণ্ডল।

https://p.dw.com/p/4HS9H
Indien | Sukamar Mondal bemalt ein Durga Idol
ছবি: Satyajit Shaw

কলকাতা উৎসবের জন্য সেজে উঠেছে। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে যাচ্ছে। কুমোরপাড়ায় শেষ মুহূর্তে ব্যস্ততা তুঙ্গে। ব্যস্ত এক পুলিশকর্মীও। তাঁর নাম সুকুমার মণ্ডল। বেহালার জেমস লং সরণি ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত এই পুলিশকর্মীও এখন চূড়ান্ত ব্যস্ত। নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখন তিনি প্রতিমায় শেষ টান দিচ্ছেন। কনস্টেবল সুকুমারের হাতে প্রাণ পাচ্ছে ছয়টি প্রতিমা। প্রতিদিন পুলিশকর্মীর দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে সঙ্গে মৃৎশিল্পীর ভূমিকাও নিচ্ছেন তিনি। এক বেলা তিনি কঠোর শান্তিরক্ষক, অন্য বেলায় সুকুমার হয়ে উঠছেন শিল্পের স্রষ্টা।

এর শুরুটা সেই ছোটবেলা থেকে। ডয়চে ভেলের সঙ্গে সেই গল্প ভাগ করে নেন সুকুমার। বলেন, "স্কুল কিংবা মাঠে যাওয়া-আসার পথে কুমোরদের ঘরে ঠাকুর তৈরি করা দেখতাম। খুব ভাল লাগত। ভাবতাম, আমিও যদি এমন প্রতিমা গড়তে পারি। তখন থেকেই হাতে-কলমে কাজ শুরু করি।” স্কুল পড়ুয়ার চোখে তখন নানা কল্পনা, ঘুমের মধ্যেও ঘোরাফেরা করে প্রতিমার নানা রূপ। এই স্বপ্নপূরণের সুযোগ এল সুকুমার যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। তার ভাষায়, "পাড়ার দাদারা বলল ঠাকুর তৈরি করতে। কালী ঠাকুর। আমাকে বলেছিল, প্রতিমা যেমনই হোক, ওরা পুজো করবেই।

আমি ভয়ে ভয়ে কাজ শুরু করি। আমার হাতে প্রতিমার প্রথমবার বেশ ধুমধাম করে পুজো হল।”

‘ফাঁকা দিনে প্রতিমা তৈরি করি’

প্রথমে বাড়িতে অনুশীলন। মাটির তাল থেকে নানা রকম মূর্তি গড়ার চেষ্টা। অষ্টম শ্রেণিতে এসে কালী ঠাকুর গড়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকাননি সুকুমার। পরের বছরই আসে বড় সুযোগ। তিনি বলেন, "এলাকায় সরস্বতী পুজোয় থিম ছিল ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। সেখানে দুর্গা ছাড়াও অনেকগুলি মূর্তি গড়ার পরিকল্পনা ছিল। বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। এরপর বেশ আত্মবিশ্বাস এসে যায়। আর অসুবিধা হয়নি।” বছর ৩৫-এর সুকুমার এখন ফি বছর ঠাকুর গড়েন। পুলিশের চাকরি করতে হয় বলে সময় পান কম, তাই ছয়-সাতটির বেশি দুর্গা প্রতিমা গড়তে পারেন না। তবে দুর্গার পাশাপাশি বছরভর অন্যান্য প্রতিমাও টুকটাক তৈরি করেন তিনি।

ছোটবেলার খেয়ালখুশিতে আঘাত দিয়েছিল কঠোর বাস্তব। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুকুমারের সামনে উপার্জনের চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায়। চাকরির চেষ্টা শুরু করেন তিনি। তবে প্রতিমা গড়ায় ছেদ পড়েনি তাতে। যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়েন সুকুমার, তখন প্রথম দুর্গাপুজোয় প্রতিমা তৈরির সুযোগ পান। পাড়ার ক্লাবের সদস্যরা তাকে বলেন দুর্গা গড়তে। সেবার পঞ্চদুর্গা দিয়ে পাকাপাকি মৃৎশিল্পের জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র পান সুকুমার। তা থেকে যা উপার্জন হতো, সেটা চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত অক্সিজেনের মতো ছিল। সুকুমার বলেন, "২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশে চাকরি পাই। প্রশিক্ষণ শেষে রিজার্ভ ফোর্সে ছিলাম। কলকাতা পুরসভায় ডিউটি থাকত। এর পর ট্র্যাফিক গার্ডে কাজের ভার পাই। এখন বেহালার জেমস লং সরণির ট্র্যাফিক গার্ডে আমার ডিউটি।”

সিগন্যালে যেখানে গাড়ি থামে, সেখানে ওয়াকিটকি হাতে দেখা যায় তাকে। এই মানুষটিই বাড়ি ফিরে অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা সুকুমার নিজের এলাকাতেই তৈরি করেছেন ঠাকুর গড়ার শিল্পালয়। এখানে ছয়টি প্রতিমায় এখন দেওয়া হচ্ছে ফিনিশিং টাচ। ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রতিমায় শাড়ি পরাচ্ছিলেন সুকুমার। হরিদেবপুরের করুণাময়ীতে যাবে এই প্রতিমা। শিল্পী বলেন, "তিন দিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করি। তারপর ফাঁকা দিনে প্রতিমা তৈরি করি। আমার শিল্পালয়কে বড়ো চেহারা দিতে চাই যাতে আরো বেশি প্রতিমা গড়া যায়।” সেই স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছেন সুকুমার। তিনি কুমোরটুলির কারিগর নন। নন আর্ট কলেজের পড়ুয়া, প্রাক্তনী। তার একই অঙ্গে দুই রূপ— পুলিশের উর্দি খুলে ফেললেই তুলি হাতে তিনি এক শিল্পী।