উষ্ণায়নকে ঘিরে বিপর্যয়ের ঝুঁকি
১২ আগস্ট ২০১৮জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানীর একটি যৌথ গবেষণায় হতাশাজনক এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা বলেছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জন হলে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তন বিপর্যয়কর পর্যায়ে চলে যেতে পারে৷
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সুইডিশ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্টকহোম রেজিলিয়েন্স সেন্টারের জলবায়ু গবেষক উইল স্টেফেন এই গবেষক প্রতিবদনের লিড অথোর৷
তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে, সেটাই পৃথিবীর তাপমাত্রার মূল নিয়ামক নয়৷ আমাদের গবেষণা বলছে, মানবসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে তা পৃথিবীর অন্যান্য ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে, যাকে ‘ফিডব্যাক' বলা হয়৷ এটা আরও উষ্ণতা তৈরি করতে পারে, এমনকি আমরা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করলেও তা হতে পারে৷''
এ ঘটনায় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দীর্ঘমেয়াদে প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হতে পারে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
এতে বলা হয়, উষ্ণতা এভাবে বাড়লে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ থেকে ৬০ মিটার বাড়বে৷ ভেনিস, নিউ ইয়র্ক, টোকিও ও সিডনির মতো উকূলীয় অনেক শহর প্লাবিত হবে৷ এ ধরনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহরে আর মানুষের বসবাস থাকবে না৷
বিজ্ঞানীরা একে ‘হটহাউজ আর্থ' ক্লাইমেট সিনারিও বলছেন৷
সোমবার প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বা পিএনএএসে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বৈষ্ণিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি বৃদ্ধিতে ক্লাইমেট সিস্টেম কেমন হবে, তা বেশ কয়েকটি মডেলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷
হিমবাহের গলন, হিমৈশল গলে যাওয়া, সমুদ্রে ব্যাকটেরিয়া ও কার্বন সিংক দুর্বল হয়ে পড়ার মধ্যে সম্পর্ক ও চেইন রিঅ্যাকশন দেখা গেছে৷
ফিডব্যাক প্রক্রিয়া হিসেবে জলবায়ুর পরিবর্তন, বনের ওপর প্রভাব ও হিমৈশলের গলনে তাতে বিদ্যমান কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটে তা পরিবেশের অন্যান্য ‘শত্রুদের‘ ওপর প্রভাব ফেলে৷ এতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিভিন্ন উপাদানে সংরক্ষিত কার্বন নিঃসরণ ঘটে তা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে৷
ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তুষারপাত, বজ্রঝড় হয়ে থাকে বলে জানান স্টকহোম রেজিলিয়েন্স সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জোহান রকস্ট্রম৷
‘‘এ সব টিপিং এলিমেন্ট সারিবদ্ধ ডোমিনোর মতো আচরণ করে৷ একবার কোনোটা দুর্বল হলে সেটা পৃথিবীর সিস্টেমের আরেকটিকে আঘাত করে৷ সব ডোমিনোকে ধসের হাত থেকে রক্ষা করা খুব কঠিন বা অসম্ভব হয়ে ওঠে৷''
এরপর পৃথিবী ক্রমশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রায় উষ্ণ হতে থাকে৷ এমনকি মানুষ পুরোপুরি গ্রিন হাউস নিঃসরণ বন্ধ করলেও তা হতে থাকবে৷
‘‘যদি ‘হটহাউজ আর্থ' বাস্তবে হয়, তাহলে পৃথিবীর অনেক জায়গা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে,'' বলেন রকস্ট্রম৷
এএইচ/ডিজি
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো লিখুন নীচের ঘরে৷