‘উৎপলের অপহরণকারীদের সাজা চাই'
২০ ডিসেম্বর ২০১৭তবে কারা তাঁকে ধরে নিয়েছিল, কোন এলাকায় আটকে রাখা হয়েছিল – সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত পৌঁনে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আধুরিয়া শাহজালাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনে একটি মাইক্রোবাস থেকে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়৷ খবর পেয়ে সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় ভুলতা ফাঁড়িতে৷ রাত আড়াইটার দিকে সেখান থেকে উৎপলকে নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরায় যান পরিবারের সদস্যরা৷
ভুলতা ফাঁড়িতে উৎপল সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ধানমণ্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়৷ তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘পেছন থেকে আমাকে ধরে একটি গাড়িতে তোলার পর চোখ বেঁধে ফেলায় কারও চেহারা দেখতে পাইনি৷ আমাকে নিয়ে টিনশেডের নর্মাল একটা ঘরে আটকে রেখেছিল৷ সেখানে তিনবেলা দরজার নীচ থেকে খাবার দেওয়া হতো৷ ঘরে চৌকি বা খাট ছিল না, ফ্লোরে থাকতে হতো৷ ওই ঘরের সঙ্গে একটা বাথরুম ছিল৷ সেখানে গোসল করতাম৷''
উৎপল বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম দিকে তাঁকে চড় থাপ্পড় মারা হয়েছে৷ ‘‘তারা আমাকে বলত, তোর অনেক টাকা তুই টাকা দে৷ আমার মোবাইল ফোন তারা নিয়ে নিয়েছিল৷ মঙ্গলবার রাতে চোখ বাঁধা অবস্থায় তিন-চার ঘণ্টা একটি গাড়িতে করে আমাকে ঘোরানো হয়৷ তারপর নামিয়ে দেওয়া হয় ওই ফিলিং স্টেশনে৷''
এদিকে উৎপলের ফিরে আসার খবরে রাত আড়াইটার দিকে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়িতে ছুটে যান তাঁর মা, বাবা, বোনসহ কয়েকজন আত্মীয়৷ উৎপলের বোন বিনিতা রানি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘একমাস আগে এক লোক ফোন করে বলেছিল, সে নাকি এসআই রিপন তালুকদার৷ উৎপলকে মুর্মুর্ষু অবস্থায় টাঙ্গাইলে পাওয়া গেছে, তাঁর চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, এই কথা বলে সে টাকা পাঠাতে বলে৷''
উৎপল দাস ফিরে আসায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই স্বস্তি জানিয়েছেন৷ কাবেরি গায়েন লিখেছেন, ‘‘উৎপল দাস ফিরে এসেছে, এর চেয়ে আনন্দের খবর আর হয় না৷ নাহয় ওর চেহারা শনাক্ত করতে কষ্টই হলো৷ দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলের জন্যই হয়ত৷ না হয় কোনো কথা নাই বলুক আর, তবুও ফিরে এসেছে তো! এবার মুবাশ্বার ফিরে আসুক৷''
পীর হাবিব ঈশ্বরের কাছে শুকরিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের উৎপল ফিরেছে৷ বলেছে সেই প্রাণবন্ত উৎফুল্ল কণ্ঠে আমি ভালো আছি৷ মায়ের কাছে বাড়ি যাচ্ছি, কাল বা পরশু অফিসে যোগ দেবো৷ সরকার,আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গণমাধ্যম সবার কাছে কৃতজ্ঞতা৷ বুক থেকে ভারি পাথর নেমেছে৷''
দেব দুলাল গুহ লিখেছেন, ‘‘সবার মনে একটাই প্রশ্ন কোথায় ছিলেন উৎপল? স্বেচ্ছায় উধাও ছিলেন নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল?''
এসএম ইমরুল কায়েস লিখেছেন, ‘‘কিছুটা একগুয়ে এই ছেলেটা প্রাণচঞ্চল৷ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াতে অনিশ্চিত শংকায় দিন যাপন করছিলাম আমি৷ বিধাতা তাঁকে সুস্থ অবস্থায় তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত এনেছে এই জন্য শুকরিয়া৷ বাকি হারিয়ে যাওয়াদের দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত আসার দোয়া করি৷ সবাই ভালো এবং সুস্থ অবস্থায় ফেরত আসুক এই কামনা করি৷''
কুদ্দুস আফরাদ লিখেছেন, ‘‘নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাস অবশেষে আড়াই মাস পর ফিরে এসেছেন৷ তাৎক্ষণিক ছবিতে তাঁর চেহারাই বলে দিচ্ছে এতদিন কেমন ছিলেন, কোথায় ছিলেন তিনি৷ আমরা উৎপলের অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের আইনানুগ সাজা চাই৷''
অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্ব-পশ্চিমবিডি ডট নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল গত ১০ অক্টোবর দুপুরে মতিঝিলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না৷ উৎপল ছাড়াও গত চার মাসে ঢাকায় রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী মিলে ডজনখানেক মানুষ নিখোঁজ হন৷ সর্বশেষ ৪ঠা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিদেশ ফেরত মেয়েকে আনতে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন সাবেক কূটনীতিক এম মারুফ জামান৷ সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজদের মধ্যে উৎপলের আগে পরিবারের কাছে ফেরেন ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়৷ তিনিও আড়াই মাস ‘অজ্ঞাতবাসে' ছিলেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ