উৎসবের আনন্দ শেষ, এবার বিসর্জন করে দূষণ সৃষ্টির পালা
৭ অক্টোবর ২০১১পশ্চিমবঙ্গে তথা কলকাতায় এবারে পূজা মিটেছে নির্বিঘ্নে৷ যানজট ছিল প্রতিবারের মতই৷ মেট্রো রেল কখনো ঠিক, কখনো বিকল হলেও চলেছে সারাক্ষণই৷ পুলিশ তাদের দায় দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে প্রশংসিত হয়েছে৷ মানুষ অনেক আনন্দ করেছেন৷ পরের বছরের পুজোর জন্য এবার প্রতীক্ষা শুরু৷
অন্য অনেকের মতই সঙ্গীতা মুখার্জ্জী নামের এক সরকারি কর্মচারি তরুণী পুজোর দিনগুলো আনন্দে কাটিয়েছেন৷ কিন্তু তারপরে পূজা শেষ হওয়ার পর বিজয়া দশমী বা শেষ পুজোর দিনটি থেকেই তাঁর ভাবনায় এসেছে অন্য একটি প্রসঙ্গ৷ আর তাহল ভাসান বা নিরঞ্জন৷
নিয়মমাফিক প্রতিমাগুলিকে পুজোর পরেই গঙ্গায় বা স্থানীয় জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়৷ সরকারি নিয়ম আছে, প্রতিমার মাটি গলে গেলে যে কাঠামো বা বাঁশ, কাঠ, খড়, দড়িদড়া দিয়ে যে কাঠামো তৈরি, তা জল থেকে তুলে এনে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার৷ কারণ তা নাহলে এইসব বস্তুই নদীর নির্মল জলে বিপুল দূষণের মাত্রা বাড়াবে৷
কিন্তু ওই নিয়মেই আটকে আছে বাকি বিষয়টি৷ কাজের ক্ষেত্রে সেই সচেতনতা কতগুলি পুজো কমিটি দেখাতে পারে, তা প্রশ্নবিদ্ধ৷ সঙ্গীতা জানাচ্ছেন, পুজোর পরে বাবুঘাট বা গঙ্গার অন্যান্য ঘাটে গেলে দেখা যায়, এমন কিছু প্রতিমার কাঠামো জল থেকে তুলে একপাশে রাখা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলিকে অন্যত্র সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটি আর কোন দায়বোধ দেখায় বলে তাঁর কখনোই মনে হয়নি৷
সঙ্গীতা আরও জানাচ্ছেন, আজকাল বড় বড় পুজো কমিটির তরফে ‘গো গ্রিন' ধুয়ো বেশ নিয়মিত শোনা যায়৷ নিজেরা যে পরিবেশ সচেতন, সেটা বোঝাতে তাঁরা এমনকি দুর্গামূর্তিকে গাছে তুলে পুজো করেন, এমন উদাহরণও আছে৷ অথচ, যে নদীটি শহরের একপাশে রয়েছে, যাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় আধ্মাত্মিকতা তার স্বরূপ খুঁজে পায়, তার বুকে ক্রমবর্দ্ধমান দূষণ ঠেকাতে কোন সচেতনতাই কিন্তু কাজ করেনা৷ দুর্ভাগ্যের বিষয়, পরিবেশকে বাঁচানোর এই সচেতনতা না আসা পর্যন্ত বোধহয় উৎসবের আসল আনন্দটা অধরা থেকে যায়৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ