ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, টিকা আর সচেতনতার তাগিদ
২ জানুয়ারি ২০২২গত বছর ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর টালমাটাল ছিল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা৷ হাসপাতালে রোগিদের ভিড়, অক্সিজেন সংকটসহ নানা পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে মানুষকে৷ এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বরে নানা দেশে করোনা সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে৷ সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্ক৷
কয়েক মাসতুলনামূলক কম থাকার পর বাংলাদেশেও গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের উর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে তাই জোর পদক্ষেপের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের৷
বাড়ছে সংক্রমণ
গত ডিসেম্বরের ৬ তারিখে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার শতকরা এক ভাগের কাছাকাছি নেমে এসেছিল৷ ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়া এবং কমার মধ্য দিয়ে এই ধারা অব্যহত ছিল৷ ১৮ ডিসেম্বরেও সংক্রমণের হার ছিল শতকরা এক ভাগের কিছু বেশি৷ কিন্তু এরপর থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে৷ গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার শতকরা ২.৯১ ভাগে উন্নীত হয়েছে৷
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, স্থিতিশীল থাকার পর সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে৷ গত ২০ ডিসেম্বর থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে৷ গত এক মাসের মধ্যে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণের মাত্রা ছিল দুই শতাংশের নীচে, অনেক ক্ষেত্রে তা এক শতাংশের কাছাকাছি ছিল৷ গত ২৬ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল দুই শতাংশের নীচে৷ তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তা দুই শতাংশের নীচে আর নামেনি৷ গত ৩১ ডিসেম্বর শনাক্তের হার বেড়ে দুই দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়৷
তিনি জানান, ‘‘গত সাত দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯২৪ জনের৷ আগের সাত দিনের তুলনায় সংক্রমণের মাত্রা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে৷ গত সাত দিনে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় অনেক বেশি৷’’
তিনি বলেন, গত নভেম্বরে করোনা রোগী ছিল ছয় হাজার ৭৪৫ জন৷ ডিসেম্বেরে তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ২৫৫ জন৷
গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৭ জন৷ মারা গেছেন একজন৷ সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৬ জন৷ মারা গেছেন ২৮ হাজার ৭৭ জন৷ ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সি মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন, শতকরা ৩১.২ ভাগ৷
করোনা সংক্রমণে এখনো সবার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ৷
‘টিকাদান ও সচেতনতা জরুরি’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ভাগের অর্ধেককে এখনো টিকা দিতে পারিনি৷ টিকা পর্যাপ্ত থাকার পরও মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে৷ আমাদের দরকার এখন সবাইকে টিকার আওতায় আনা৷ আমাদের প্রচার-প্রচারণা পর্যাপ্ত নয়৷ সত্যিকার অর্থে কমিউনিটিকে এখনো সম্পৃক্ত করা যায়নি৷ এটা করা না হলে টিকায় সফলতা পাওয়া কঠিন৷’’
স্বাস্থ্য সতেনতা এখন নেই বললেই চলে৷ আর অনেকে মনে করছেন দুই ডোজ টিকা দেয়ার পর আর কোনো ভয় নাই৷ এই প্রবণতা অনেক ক্ষতিকর বলে মনে করেন করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো শহীদুল্লাহ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মাস্ক পরতে হবে এবং সভা সেমিনার যত বেশি অনলাইনে করা যায় ততই ভালো৷ আর দ্রুত সবাইকে করোনার টিকা দিতে হবে৷’’
তার দাবি, ‘‘ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কের তেমন কিছু না থাকলেও এটা খুব দ্রুত ছড়ায়৷ তাই যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যে এটা দ্রুত ছাড়ানোর আশঙ্কা আছে৷’’
জানা গেছে, জাতীয় পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারে কঠোরতা আরোপ করার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে৷ সভা সমবাবেশ অনলাইনে করার ওপর তাগিদ দেয়া হবে৷ জোর দেয়া হবে ভ্যাকসিন প্রদানের ওপর৷
ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘ওমিক্রন ঠেকানোর জন্য স্থল এবং আকাশপথের প্রবেশে স্ক্যানিং এখনো কার্যকর নয়৷ এগুলো কার্যকর করা প্রয়োজন৷’’