এইচআইভি আক্রান্তদের দুর্ভোগ
১৬ ডিসেম্বর ২০১৩বছর দশেক আগে তাঁর প্রতিষ্ঠানে এইচআইভিতে সংক্রমণের কথা জানান হলগার৷ তাঁর সৌভাগ্য বলতে হবে, তখনকার বস হালকাভাবেই নিয়েছিলেন বিষয়টিকে৷ তাঁর এই অকপটতা ক্যারিয়ারে কোনো ক্ষতি করেনি৷ বরং উল্টোটাই হয়েছে৷ আজ তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান৷
আগের মতই কর্মতৎপর
শারীরিক দিক দিয়ে বেশ ভাল আছেন হলগার৷ দিনে একবার একটি ট্যাবলেট নিতে হয় তাঁর৷ বিপজ্জনক কোনো অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এই ওষুধ৷ হলগার আগের মতোই কর্মতৎপর৷ তবে কিছু কিছু বিষয়ে পরিবর্তন হয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নিজের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয় বেশি৷ চাপ কমাতে হয়, যাতে কাজ করতে কোনো অসুবিধা না হয়৷''
আগে এইডস রোগের নাম শুনলেই মৃত্যুদণ্ডের কথা মনে হতো৷ ২০ বছর আগেও অসুখটিকে দমন করার মতো তেমন কোনো উপায় ছিল না৷ রোগী কয়েক মাস বা কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যেতেন৷
কয়েক বছর আগেও রোগটি ছিল মারাত্মক
১৮ বছর আগে আঙ্গেলিকা যখন জানতে পারেন, যে তিনি এইচআইভিতে আক্রান্ত, তখন তাঁর মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে৷ সেসময় অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি ছিল না৷ আজ তাঁর বয়স ৫৫৷ বছর দশেক আগে মাদকাসক্তদের পরামর্শ কেন্দ্রের কাজটি ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে৷ তখন থেকে কর্মে অক্ষম জনিত পেনশন পাচ্ছেন তিনি৷ আঙ্গেলিকা জানান, ‘‘এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কিছুদিন আমার খুব খারাপ কেটেছে৷ তাই বিশ্রামের জন্য কাজটা ছেড়ে দিতে হয়েছে৷''
তবে নতুন ওষুধ বাজারে আসায় এইচআইভি-পজিটিভদের আয়ু জার্মানদের গড় আয়ুর প্রায় কাছাকাছি এখন৷ কোনো জটিলতা দেখা না দিলে জীবনের মানেও তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না৷
বৈষম্যের শিকার
এইচআইভিতে আক্রান্তদের দুই তৃতীয়াংশ স্বাভাবিকভাবেই পেশাগত কাজকর্ম করে থাকেন৷ এই সংখ্যাটা সারা জার্মানিতে প্রায় ৫০,০০০৷ এদের সংখ্যা আরো বেশি হতো, যদি না তারা বৈষম্যের শিকার হতেন, মনে করেন ‘জার্মান এইডস সাহায্য কেন্দ্র'এর পরিচালনা বোর্ডের মানুয়েল ইৎসডেবস্কি৷ তাঁর কথায়, ‘‘এইচআইভিতে আক্রান্ত মানুষদের আয়ুষ্কাল স্বাভাবিক হলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না তারা৷ কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নেতিবাচক মনোভাবের শিকার হতে হয়৷''
সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানটি ৩০ বছর ধরে এইচআইভি আক্রান্তদের সহায়তা দিয়ে আসছে৷ আগে এ সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা ছিল না৷ এখন জার্মানির অধিকাংশ মানুষই এই রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানে৷ সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ প্রতি বছর তিন হাজারের মতো এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা ঘটে জার্মানিতে৷ পশ্চিম ইউরোপের যেসব দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের হার সর্বনিম্ন তার মধ্যে জার্মানিও একটি৷
কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা
তবে কর্মক্ষেত্রে এইডস-এর ব্যাপারে অনিশ্চয়তা এখনও বড়৷ সহকর্মী, বস ও কর্মকর্তাদের অনেকেই এক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত, শঙ্কিত৷ এইচআইভিতে আক্রান্তদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারেও অনীহা দেখা যায়৷ কেননা মনে করা হয় তারা সংক্রমণের কারণে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকতে পারে৷
‘‘আগেকার চিত্রটাই মাথায় রয়ে গেছে অনেকের৷ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এমন কাউকে নিয়োগ দিতে চাইবেন না, যিনি কঠিন অসুখে ভুগছেন, হয়তো শিগগিরই মারা যাবেন৷ বিষয়টি বোধগম্যও৷ কিন্তু এখন অবস্থা তো অনেক বদলে গিয়েছে,'' বলেন এইডস সাহায্য কেন্দ্রের ইৎসডেবস্কি৷
প্রতিবছরই বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে নানা রকম ক্যাম্পেইন ও কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড কর্মসূচির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে৷ প্রকাশ করা হয়েছে সংহতি৷ বছর খানেক ধরে জার্মানিতে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে এইচআইভি-আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান৷