এইডসের ত্রিশ বছর
২১ মে ২০১৩সোমবার প্যারিসে একটি তিনদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়েছে ‘‘ভবিষ্যতের কল্পনা'', এই শীর্ষক দিয়ে, কেননা ত্রিশ বছর আগে ঠিক ঐ দিনেই লুক মঁতানিয়ের-এর নেতৃত্বে পাস্তুর ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী সেই ‘খুনি' ভাইরাস আবিষ্কার করেন, ইংরিজিতে যার নাম দেওয়া হয় হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি৷ পরে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয় সেই আবিষ্কারকে৷
১৯৮৩ সালে এইচআইভি আবিষ্কার ও পৃথক করা হয়৷ ১৯৮৪ সালে প্রমাণ হয় যে এই ভাইরাসই এইডস রোগের কারণ৷ তারপর থেকেই রক্তপরীক্ষা করে এইডস-এর সংক্রমণ যাচাই করা শুরু হয়, শুরু হয় অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল ওষুধপত্রের বিকাশ৷ বহু বছর গবেষণার পর ১৯৯৬ সালে অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল ড্রাগস চালু করা হয়, যা আজও মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছে৷
খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা
এই ড্রাগগুলি রোগীর শরীরে ভাইরাসের মাত্রা কমিয়ে কোনো এইচআইভি আক্রান্ত মা যেন তাঁর বাচ্চাকে সংক্রমিত না করতে পারেন, অথবা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যা-তে ভাইরাসটি সংক্রমিত না হতে পারে, তার ব্যবস্থা করে৷ কিন্তু এইচআইভি-র টিকা আবিষ্কারে অনুরূপ সাফল্য পাওয়া যায়নি৷ ঐ রহস্যজনক ভাইরাস, যা অনায়াসে মিউটেট করে বা নিজের রূপান্তর ঘটায়, তার অ্যান্টিবডি খুঁজে পাওয়া প্রায় খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
‘নিরাময়ের' পথ?
কাজেই নিরুপায় হয়েই আবার দৃষ্টি পড়েছে ‘‘নিরাময়ের'' দিকে৷ এক্ষেত্রে রণকৌশলটি বাতলান ফ্রঁসোয়াজ বারে-সিনুসি, যিনি ২০০৮ সালে মঁতানিয়ের-এর সঙ্গে নোবেল প্রাইজ পান৷ বছর তিনেক আগে বারে-সিনুসি এইচআই ভাইরাসের ‘‘আধারটি'' আক্রমণ করার কথা বলেন৷ এটি কোষের মধ্যে একটি নিরাপদ স্থান, অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল ওষুধের মুখোমুখি হয়ে ভাইরাসটা যেখানে আত্মগোপন করে৷ পরে ওষুধ বন্ধ করলেই ভাইরাস আবার তার নিরাপদ স্থান থেকে বেরিয়ে রক্তস্রোতে মিশে পড়ে এবং শরীরে ছড়িয়ে যায়৷
কাজেই বিজ্ঞানীরা চান বুঝতে, ভাইরাস ঠিক কোথায় আশ্রয় নেয়; তা এরকম কার্যকরিভাবে আত্মগোপন করে কিভাবে; তাদের গোপন আস্তানা থেকে বার করে আনার পন্থাটাই বা কি৷ ভাইরাসকে তার আস্তানা থেকে বার করে আনার প্রচেষ্টা চলেছে একটি অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগের মাধ্যমে৷ বিশজন পেশেন্টের মধ্যে ১৮ জনের ক্ষেত্রে ক্যানসার ড্রাগটি ভাইরাসকে তার আস্তানা থেকে টেনে বার করতে পেরেছে৷
‘ফাংশনাল কিউর'
অপর পন্থাটি হল যাকে বলা হচ্ছে ‘‘ফাংশনাল কিউর''৷ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল দিলে এই ধরনের ‘‘নিরাময়ের'' আশা থাকে: যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি-তে একটি সদ্যোজাত শিশুকে তার জন্মের ৩০ ঘণ্টার মধ্যে আগ্রাসী অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে দৃশ্যত ভাইরাসমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷
ফ্রান্সে ১৪ জন এইচআইভি পেশেন্টকে সংক্রমণের দশ সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টিরিট্রোভাইরাল দিয়ে সুফল পাওয়া গিয়েছে৷ তিন বছর ধরে এদের এই ট্রিটমেন্ট চলে৷ সে যাবৎ তারা দৃশ্যত সুস্থই আছে৷
যে মারণব্যাধি সারা বিশ্বে তিন কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছে, যে রোগে আজও সারা বিশ্বে তিন কোটি চল্লিশ লাখ মানুষ আক্রান্ত, যে রোগে আজও বছরে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় – তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে যে কোনো প্রগতি একটি বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করতে হবে৷
এসি/ডিজি (এএফপি)