‘একসঙ্গে কাজ করলে উভয়েরই লাভ'
১৯ নভেম্বর ২০১৪বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এনআইএ কর্মকর্তা যে সব তথ্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন৷ বাংলাদেশের ব়্যাব-পুলিশ আগে থেকেই জঙ্গিদের ব্যাপারে আন্তরিক৷ এখন তারা এনআইএ-র দেয়া তথ্য নিয়ে কাজ করবে৷ কারণ জঙ্গি সমস্যা শুধু আমাদের নয়, ভারতের জন্যও এখন এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ও ব়্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব়্যাব আগেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল৷ বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকেও এ সব তালিকা দেয়া হয়৷ কিন্তু বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়ায় জঙ্গিরা বর্ধমানে আস্তানা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল৷ বাংলাদেশের ৪১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে৷ ওদের গ্রেপ্তার করা গেলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ এছাড়া বাংলাদেশের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন জঙ্গি নেতাসহ অন্তত দু'ডজন শীর্ষ জঙ্গি নেতা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লুকিয়ে আছে৷ বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন মাদ্রাসায় তাদের অবস্থান৷ কেউ কেউ ওই সব মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবেও কাজ করছে বলে আমার কাছে খবর আছে৷''
কর্নেল জিয়াউল বলেন, ‘‘দেরি করে হলেও দুই দেশ যে জঙ্গিবিরোধী কাজ একসঙ্গে করার ব্যাপারে ঐক্যমতে আসতে পেরেছে, সেটাই বড় কথা৷ এভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে এ এলাকায় জঙ্গিদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না৷ বাংলাদেশে জঙ্গিদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স' দেখানো হয়৷ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, তারাও ‘জিরো টলারেন্স' দেখাবেন৷ ফলে দুই দেশ এসসঙ্গে অভিযান চালালে জঙ্গিরা পালাতে পারবে না৷ আগে বাংলাদেশে অভিযান হলে ওরা ভারতে চলে যেত, আবার ভারতে অভিযান হলে বাংলাদেশে চলে আসত৷ ওদের জন্য সীমান্ত পাড়ি দেয়া খুব একটা কঠিন নয়৷ এখন আর তারা এভাবে পালিয়ে থাকতে পারবে না৷''
স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা নিয়ে এনআইএ যেসব তথ্য দিয়েছে, তা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়৷ দুই দেশই মনে করে, নিজেদের ভূখণ্ড দুষ্কৃতকারীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশ – দুই দেশেই দুষ্কৃতকারীরা রয়েছে৷ এদের খুঁজে বের করা দরকার৷ আমরাও তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি৷''
তবে বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এনআইএ-র কর্মকর্তাদের কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনআইএ-র মহাপরিচালক শারদ কুমার শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ আমরা একসঙ্গে কাজ করব৷''
এ সব বৈঠকের প্রাপ্তি কী? – এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের বৈঠক হলে উভয় দেশই লাভবান হয়, কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য এক৷ আমরা সবাই চাই সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্ব৷ আর বাংলাদেশে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিলে ভারতও নিরাপদ থাকবে না৷ আবার ভারতে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিলে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে না৷ ফলে আমাদের একসঙ্গেই কাজ করতে হবে৷ তাহলে উভয় দেশই নিরাপদ হবে৷''
বৈঠকের ব্যাপারে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘তারা ১১টি নাম দিয়েছেন৷ সেগুলো ভারতীয় না বাংলাদেশি তা নিশ্চিত নয়, কারণ, একেকজন জঙ্গির ১০০টিও নাম থাকে৷ তবে এগুলো এখন যাচাই করা হবে৷ জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিরা যাতে এপাশে (বাংলাদেশ ) বা ওপাশে (ভারত) মাথাচাড়া দিতে না পারে, আশ্রয় নিতে বা ঘাঁটি গাড়তে না পারে, সেজন্যও আমরা কাজ করব৷''