এক সিটিতে দু’জন মেয়র
২০ জুন ২০১৩প্রধান নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার জানান, ‘‘আইনি জটিলতা নিরসন না করে নবনির্বাচিতদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে এক সিটিতে দু'জন মেয়র আর প্রতিটি ওয়ার্ডে দু'জন করে কাউন্সিলর হবেন৷' স্বাভাবিকভাবেই প্রধান নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্যের পর নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে৷
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা তাঁদের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন৷ কিন্তু আগামী অক্টোবরের আগে এই শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে একই সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকবেন দু'দল৷ একদল নবনির্বাচিত, আরেক দল বিদায়ী৷ অন্যদিকে একই কর্পোরেশনে একজন থাকবেন নবনির্বাচিত মেয়র ও অন্যজন বিদায়ী প্যানেলের মেয়র৷ এ কারণে পুরাতনদের মেয়াদ শেষ না হওয়ার পর শপথ অনুষ্ঠান করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে৷
নবনির্বাচিতদের শপথের বিষয়টিকে আইনের ‘মারাত্মক ত্রুটি' হিসাবে উল্লেখ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমলাতন্ত্রের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না৷ সাধারণত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে মেয়াদ শেষের পরবর্তী ৯০ বা ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেওয়াজ রয়েছে৷ কিন্তু নতুন করে মেয়াদ শেষের আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের বিধান করা হয়েছে৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা দেখছি সরকারি কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি করেন৷ যদিও সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হবে৷''
গত ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে মেয়র পদে চারটি সিটি কর্পোরেশনেই বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হন৷ রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি, বরিশালে আহসান হাবিব কামাল ও সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন৷
এদিকে, আইনি জটিলতা এড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন সংশোধন করা হলে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথে আর বাধা থাকবে না৷ এসব বিষয়ে মতামত নিতে স্থানীয় সরকার বৃহস্পতিবারই আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে৷ আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর, নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে৷ আর তারপর শপথের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন৷ এমনটাই হওয়ার কথা৷ কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত আসার আগেই নির্বাচিতদের নাম গেজেটে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়ায়, দেখা দিয়েছে সংকট৷
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম শহীদ খান জানিয়েছেন, যেহেতু মেয়ররা পদত্যাগ করেই নির্বাচন করেছেন সেজন্য তাঁদের পদ শূন্য হয়েছে৷ এখন শূন্য পদে নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব প্রদানে আইনগত জটিলতা থাকার কথা নয়৷ তবে আইনে যেহেতু মেয়রের মেয়াদকাল পাঁচ বছর উল্লেখ আছে, সেক্ষেত্রে তার আগে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে৷ অবশ্য তিনি এও বলেন যে, অকারণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বের বাইরে রাখা হবে না৷
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইন অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দিয়ে দায়িত্ব দেয়ার কথা৷ কিন্তু হঠাত্ করে এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা এবং নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া৷
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের পূর্ববর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী, এ বছরের ৭ অক্টোবরের মধ্যে বরিশাল, ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজশাহী ও সিলেট, ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুলনার নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা ছিল৷