এগরা বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ভানুর মৃত্যু
১৯ মে ২০২৩বৃহস্পতিবার পুলিশ জানিয়েছিল, ভানুকে কটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ছেলে ও ভাইপোও গ্রেপ্তার। কটকের হাসপাতালে ভানুর চিকিৎসা হচ্ছিল। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাত দুটোর সময় তার মৃত্যু হয়। তার দেহ রাজ্যে নিয়ে আসছে পুলিশ।
ভানুর পাশাপাশি তার ছেলে ও ভাইপোও এই বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত। ভাইপোকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ভানুর শেষকৃত্যের পরেও ছেলেকেও নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার এগরায় ভানুর বাজি কারখানায় ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয়। পুরো কারখানা পুড়ে যায়। নয়জন মারা যান। মৃতদেহগুলি কারখানা থেকে বেশ কিছুটা দূরে রাস্তায় গিয়ে পড়ে।
এরপরই ভানুর খোঁজ চলতে থাকে। বিস্ফোরণের সময় ভানুও কারখানায় ছিলেন। তার দেহ ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। সেই অবস্থায় আত্মীয়রা তাকে বাইকে করে নিয়ে কটকে ভর্তি করান। ভানুর আগে বাড়ি ছিল ওড়িশার বালেশ্বরে। সেখানকার একটি ঠিকানায় আধার কার্ডও ছিল। সেটা দেখিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, রান্নার তদারকি করতে গিয়ে সিলিন্ডার ফেটে এই অবস্থা হয়েছে।
তবে এরপরেও একটি হাসপাতাল তার চিকিৎসা করেনি। একটি হাসপাতাল অন্য হাসাপাতালে তাকে রেফার করে। তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে।
ইতিমধ্য়ে বৃহস্পতিবার সিআইডি ওই হাসপাতালে পৌঁছে যায় এবং ছেলে ও ভাইপোকে ধরে। পরে ভানুর মৃত্যু হয়।
ভানুর বিরুদ্ধে
ভানুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিয়োগ আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভাদুর কাছে বাজির কারখানার কোনো লাইসেন্স ছিল না। তা সত্ত্বেও সে দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানাটি চালায়। গ্রামবাসীরা অতীতে অভিযোগ করলেও পুলিশ-প্রশাসন কিছু করেনি। অভিয়োগ, ভানু ছিল খুবই প্রভাবশালী।
গ্রামবাসীদের অনেকেই ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ভানুর কারখানায় বাজি ছাড়াও বোমা বানানো হত। আর বোমা তৈরি করতে গিয়েই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ। সাবেক পুলিশকর্তাও বলেছেন, বিস্ফোরণের মাত্রা দেখে তার মনে হচ্ছে, বোমাই ফেটেছে।
গ্রামবাসীরা ভানু বাগের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ডিডাব্লিউয়ের চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভানুর প্রতিবেশী ঝর্না বাগের মতে, ভানু ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার পেশাটা ছিল খুব খারাপ।
বিস্ফোরণে স্বামীকে হারিয়েছেন সুমা জানা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ভানু বাগকে তিনি শাস্তি দিতে চান। সুমা কিছু করার আগেই অবশ্য ভানু না ফেরার দেশে চলে গেছে।
আবার স্ত্রীকে হারানো সঞ্জিত বাগ কান্নায় ভেহে পড়ে বলেছেন, তার দুইটি ছোট বাচ্চাকে এখন তিনি কীভাবে মানুষ করবেন। এ সবই হয়েছে ভানু বাগের জন্য।
স্থানীয় মানুষ এও অভিযোগ করেছেন, কেউ কাজ করতে না চাইলে ভানু হমকি দিয়ে করাতো।
তারা অভিযোগ করেছেন, শুধু বাজি কারখানাই নয়., ভানুর একটি ওষুধের কারখানা ছিল। ভানু খাদিকুলে একটি বাড়িতে থাকতো। তাছাড়াও তার একটি বিলাসবহুল বাড়ি ছিল।
মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই
বিস্ফোরণে আহত দুই জন এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। তাদের কলকাতা নিয়ে আসা হয়েছে। এসএসকেএমে তারা ভর্তি আছেন।
বিজেপি-র মিছিলে বোমা, গুলি
এগরাকাণ্ডের প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে মিছিল বের করেছিল বিজেপি। তার নেতৃত্বে ছিলেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, মিছিলে বোমা মারা হয়। গুলিও চলে। সিআইএসএফ জওয়ানরা গুলি চালান। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল।
তৃণমূল অবশ্য় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, জি২৪ঘণ্টা, আনন্দবাজার)