এবার উত্তপ্ত বিশ্বভারতী
১৬ জানুয়ারি ২০২০জামিয়া মিলিয়া, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এ বার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী। বুধবার রাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবিভিপি এবং বাম ছাত্ররা। ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাম সংগঠনের দুই ছাত্র। তবে এবিভিপি সংঘর্ষে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকেলে। অভিযোগ, তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়চত্বরে ঘুরতে দেখা যায় এবিভিপির কিছু ছাত্রের সঙ্গে বহিরাগতদের। বাম এবং অবিজেপি ছাত্রদের তারা হুমকিও দিতে থাকে। কিন্তু তখনও কোনও সংঘর্ষ হয়নি। মারপিট শুরু হয় রাতের দিকে। অভিযোগ, রাত ১০টার পরে পূর্বপল্লি হস্টেলের ভিতরে ঢুকে পড়ে বহিরাগতরা। শুরু হয় ভাঙচুর এবং মারধর। অর্থনীতির এক ছাত্রকে বেধরক মেরে রাস্তায় নিয়ে আসা হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। রাস্তাতেও তাকে বাঁশ এবং রড দিয়ে মারা হয়। ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে যান অন্যান্য হস্টেলের ছাত্ররা। আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে তাঁরা নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে ভর্তি তিনি। বিশ্বভারতীর আর এক অর্থনীতির ছাত্র ফাল্গুনী পান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''হাসপাতালেও চড়াও হয় এবিভিপির ছাত্র এবং গুন্ডারা। সেখানে আর এক প্রস্থ মারধর শুরু হয়। আমিও আহত হই। শুধু ছাত্রদের নয়, শিক্ষকদেরও হুমকি দেওয়া হয়। এমনকী, প্রাণনাশের কথাও বলা হয়। উপাচার্য সবই জানেন। তিনি গুন্ডাদের আড়াল করছেন।''
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ''এ সব প্রশ্ন করে উপাচার্যকে বিরক্ত করবেন না।''
এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকারের বক্তব্য, ''বাম এবং আরবান নকশালরা বিশ্বভারতীতে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। আমাদের কেউ সেখানে ছিল না। গতকাল যা হয়েছে তা বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ। আমাদের নাম অকারণে জড়ানো হচ্ছে।'' যদিও বিশ্বভারতীর ছাত্রদের বক্তব্য, যাদের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে, তারা সক্রিয় এবিভিপি কর্মী।
বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধর্না শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাদের দাবি, উপাচার্য আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
কিছুদিন আগে উপাচার্যের আমন্ত্রণে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত সিএএ নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতীতে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একাংশ সেই অনুষ্ঠান ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে এ ধরনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান তাঁরা হতে দেবেন না। এবং এর জন্য উপাচার্যকেও নিশানা করেন তাঁরা। রাত পর্যন্ত স্বপন দাশগুপ্তের অনুষ্ঠানস্থল ঘেরাও করে রাখা হয়।
স্থানীয় মানুষ এবং শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের বক্তব্য, তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ছিল। বুধবার রাতে যা চরম চেহারা নেয়। ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূলও। বৃহস্পতিবার বিবৃতি জারি করে তৃণমূল জানিয়েছে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।