এমন নিরাপত্তায় বিশিষ্টজনরা কতটা নিরাপদ?
৫ মার্চ ২০১৮সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিরিয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সব পুলিশ সদস্য যে প্রশিক্ষণ পায়, তাদেরও সেই প্রশিক্ষণই আছে৷ তারা রেগুলার ফোর্স৷''
শনিবার সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালেরও ওপর হামলার সময় মঞ্চে তাঁর পিছনে চার পুলিশ সদস্যও ছিলেন৷ কিন্তু চার জনের দু’জনই ছিলেন মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত৷ ওই দু'জনকে এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷
অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের নিরাপাত্তার ব্যবস্থা করা হয় ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবরের পরে৷ ওই দিন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হককে এসএসএস-এ হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ তখন তাঁরা ঢাকায় ছিলেন৷ সিলেটে ফিরে জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল৷
শনিবার হামলার পর জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘ওই দু'জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের সময় অসতর্ক ছিলেন৷ তারা মোবাইল ফোন চাপছিলেন৷ এ কারণেই তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘অধ্যাপক জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ৩৬ জন পুলিশ রয়েছে৷ তারা পালাক্রমে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালনে করেন৷ তাঁর বাসা, কর্মস্থল সবখানেই নিরাপত্তা দেয়া হয়৷ তিনি বাইরে, এমনকি ঢাকায় গেলেও আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি৷ ওই টিমে একজন গানম্যনও আছে৷ শনিবার হামলার দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট পাঁচজন পুলিশ ছিলেন৷ তাদের সঙ্গে গাড়িও ছিল৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জাফর ইকবাল স্যারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা মেট্রোপলিটন পুলিশের৷ তারা আলাদা কোনো ফোর্স নয়৷ পুলিশের যে প্রশিক্ষণ, তাদেরও সেই প্রশিক্ষণ৷ সবাইকে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তাদেরও ঠকি সেই প্রশিক্ষণই আছে৷ তাদের ফায়ারিং প্রশিক্ষণও আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্যারের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছি সব সময়৷''
তবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ক্যাম্পাস সাংবাদিক জাহিদ হাসান জানান, ড. জাফর ইকবালের নিরাপত্তা আগের মতো জোরদার ছিল না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সালে যখন স্যারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়, তখন স্যারের সঙ্গে সব সময় ১০-১২ জন পুলিশ থাকত৷ স্যারের বাসায়ও সব সময় পুলিশ থাকতো চার থেকে পাঁচজন৷ ধীরে ধীরে এই সংখ্যা কমে আসছিল৷ তবে স্যার নিজেও পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে বিরক্ত ছিলেন৷ তিনি এটা চাইতেন না৷ তিনি মনে করতেন, এতে তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে৷''
সাধারণভাবে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিব পুলিশ প্রটেকশন এবং গানম্যান পেয়ে থাকেন৷ সংসদ সদস্যরা সরাসরি গানম্যান পান না৷ তাঁরা চাইলে পান৷ এর বাইরে কেউ নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা পুলিশ প্রোটেকশন চাইলে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়৷ তাদের আবেদনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সন্তুষ্ট হলে প্রয়োজন অনুযায়ী পুলিশ প্রোটেকশন বা গানম্যান দেয়া হয়৷
তবে স্বরষ্ট্রমন্ত্রণালয় ওই নিরাপত্তা দেয়ার আগে ‘থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট' করে৷ আর এই থ্রেট অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ‘‘আমরা থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, তাঁর ঝুঁকি কতটুকু, তাঁর ব্যক্তিগত ট্র্যাক রেকর্ড এসব খতিয়ে দেখি৷ আমাদের তদন্তে যদি মনে হয় তাঁর বাড়তি নিরপত্তার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমরা গানম্যান বা পুলিশি নিরাপত্তা দেয়ার সুপারিশ করি৷ এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়৷ এই নিরাপত্তার খরচ পুরোটাই সরকার বহন করে৷ আর প্রয়োজন অনুযায়ী, গানম্যান ছাড়াও ওই ব্যক্তি যখন চলাফেরা করেন, তখনো আলাদা নিরাপত্তা দেয়া হয়৷''
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ‘‘প্রাইভেটভাবে গানম্যান রাখার বিধান নাই৷ তবে কেউ যদি সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইনেসন্স দেয় হয়৷ আর ওই আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা বা বহন করা ব্যক্তিদেরও অনুমোদন দেয়া হয়৷ তখন যারা ধনী ব্যক্তি, তারা নিজের খরচে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য গাণম্যান সাদাপোশাকে দেয়া হয়, আবার প্রটেকশন ফোর্স থেকে পুলিশও দেয়া হয়৷ আর এই কাজে যাদের দেয়া হয়, তারা কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পর্যন্ত হতে পারেন৷ তাদের আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ বাহিনী থেকেই সরবরাহ করা হয়৷ গানম্যানদের ৩০ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘শুধু আবেদন নয়, সরকার যদি মনে করে কারুর নিরাপত্তা বিধান করা জরুরি, তখন নিজ উদ্যোগেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷'' অধ্যাপক জাফর ইকবালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাঁর নিরপাত্তা সরকার স্ব- উদ্যোগেই নিয়েছে৷''
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণভাবে মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পুলিশ প্রটেকশনের বিধিমালা আছে৷ সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা করি৷ আর কেউ নিরাপত্তা চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী আমরা তা করি৷ আমাদের প্রটেকশন ফোর্স আছে৷ সাধারণত সেখান থেকেই তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে দেয়া হয়৷'’
আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷