এমন বসন্ত কখনো আসেনি
১৭ মার্চ ২০২০এইখানে রাইনের একেবারে কোল ঘেঁষে সাদাকালো আর রঙিন পাখিরা রাঙিয়ে দেয় সকাল, বিকেল সন্ধ্যা৷ যেন গ্র্যান্ডমাস্টারের তুলির ছোঁয়া৷ শীত যায়নি, বাতাসের দাঁতহীন কামড় এখনো আছে, কিন্তু আরও আছে সব নির্ঝরদের ঘুম ভাঙা আলোর ঝরণাধারা-মিষ্টি যেন কমের চেয়ে একটু বেশি আর বেশির চেয়ে একটুখানি কম৷ পাহাড়, সবুজ আর একটেরে ছুটে চলা নদী দেখে এই সময় কারো মনে হতে পারে সবকিছু একটু বেশিই নিখুঁত, প্রায় অবাস্তব যেন৷
কিন্তু এই শহরে, এই দেশে, বলতে গেলে এই গ্রহে এখন এক কালো ছায়া আড়াল করে দিয়েছে সব হাসি সব গান সবগুলো কবিতা৷ মৃত্যু চেয়ে আছে ক্রুর চোখে, আপনজন হারানোর শঙ্কা এখন পৌরাণিক তরবারির মতো মাথার উপর৷ ইশারা বা অট্টহাসিতে কে যেন নামিয়ে দিতে বলছে অঙ্ক শেষের পর্দা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মানুষ কত ক্ষুদ্র!
কী করলে বাঁচা যায়, কোথায় গেলে মিলবে নিশ্চয়তা, কাকে দায়ী করে মিলবে এতটুকু সান্ত্বনা? অনেকেই স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন, খাবার আর এটা সেটা কিনে নিজের ঘর বোঝাই করছেন, খালি করে ফেলছেন দোকানপাট৷ আবার কেউ লুকিয়ে থাকছেন, হাতে ঘষছেন জীবাণুনাশক৷ সামান্য ঘুসঘুসে কাশিতেও সারারাত নির্ঘুম চোখের কালি নিয়ে হাজির হচ্ছেন ডাক্তারদের দরবারে৷ ইটালিতে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, ফ্রান্স আর স্পেনে ঘরের বাইরে বের হলেই জরিমানা৷ খবর জানাচ্ছে, যুদ্ধ নয় তবু যুদ্ধের চেয়ে গুরুতর অবস্থা এখন৷
এই রাজ্যে করোনা আগেই এসেছে, জার্মানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তও এই রাজ্যেই৷ তাই এখানে মানুষগুলো বসন্তের বাতাস বা রোমান্টিক রাইনের স্রোতের বীঠোফেন দেখছেন না, অশুভ কোনো খেলার স্কোর দেখার মতো করে দেখছেন মৃত মানুষের সংখ্যা৷ এমনিতেই এরা হাসি ঠাট্টার জন্য খ্যাতিমান নন, কিন্তু এখন যেন গুটেনমর্গেন-গুটেনটাগ বলতেও ভুলে গেছে৷ কার থেকে যেন পালাচ্ছে সারাক্ষণ অথবা ঘরে থেকেই নিজের উপর হচ্ছে বিরক্ত৷
অফিসের জনবল এখন অর্ধেক, বাকিরা কাজ করবেন ঘর থেকে৷ আমার জানালায় যতদূর চোখ যায় কেউ নাই, কিছু নাই৷ ‘রোদন-ভরা এ বসন্ত কখনো আসেনি বুঝি আগে’৷