এমপিদের স্থানীয় উন্নয়ন বনাম নেতা-কর্মীদের উন্নয়ন
১৩ আগস্ট ২০২০ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, উন্নয়নকে সামনে রেখে সংসদ সদস্যদের নামে বরাদ্দ এই অর্থ নয় ছয় হয়৷ আর এর সুবিধা নেয় দলীয় নেতা-কর্মীরা৷
উন্নয়ন কাজের ২০ থেকে ২৫ ভাগ বিক্রি হয়ে যায়৷ কাগজে কলমে ঠিকাদার থাকলেও বাস্তবে তারা কাজ করেন না৷ প্রকল্পগুলো তদারকিও তেমন হয়না৷ টিআইবি তাদের গবেষণা এলাকায় দেখেছে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৭৪ ভাগ প্রকল্পে, ২১ ভাগ প্রকল্পে আংশিক এবং পাঁচ ভাগ প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি৷ ২৫ ভাগ প্রকল্পে কাজ চলাকালে কোনো ধরনের তদারকি হয়নি৷ আর শেষ হওয়া প্রকল্পের কাজের মান খারাপ৷
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের প্রকল্প পর্যালোচনা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে টিআইবি গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে৷ তবে সংরক্ষিত নারী আসন এই গবেষণায় নেওয়া হয়নি৷ ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ ৬২৮ প্রকল্প তাদের গবেষণার আওতায় আসে৷
প্রকল্পগুলো হলো- রাস্তাঘাট নির্মাণ, সেতু ও কালভার্ট, হাটবাজারে রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণ সংক্রান্ত৷ এইসব কাজ পেতে গিয়ে ঠিকাদারদের আবার ১৪টি ধাপে অবৈধ কমিশন খরচ করতে হয়৷ খরচের পরিমাণ প্রকল্প ব্যয়ের ৮ থেকে ১২ শতাংশ৷ টাকার অঙ্কে ৪১ হাজার থেকে ৫৯ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,‘‘আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, উন্নয়ন বরাদ্দের নামে এই বরাদ্দ হয় দলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সুবিধা দিতে৷ এটা উন্নয়নের নামে দলীয়করণ৷ এতে সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশি উন্নয়ন হয়৷ লাভ হয় দলীয় নেতা আর কর্মীদের৷ এর ফলে রাষ্ট্রের বিপূল অর্থের অপচয় হয়৷
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই অপচয়-দুর্নীতির অভিযোগমানতে নারাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা ঢালাও অভিযোগ৷ যারা এই অভিযোগ করেন তারা বাস্তবতার নিরিখে অভিযোগ করেন না৷ সংসদ সদস্যরা শুধু পরিকল্পনা করেন৷ কাজ তদারকি করেন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ৷''
কিন্তু বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ কাজে অনিয়ম হয় বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন,‘‘বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা সব সময় এগিয়ে থাকেন৷ তারা নানা সুযোগ সুবিধাও বেশি পান৷ আমার এলাকায় আমি এখনো কোনো বরাদ্দ পাইনি৷''
টিআইবি মনে করে এই অনিয়ম এড়াতে সংসদ সদস্যদের উন্নয়নমূলক কাজের বাইরে রাখা উচিত৷ তাদের মূল কাজ আইন প্রণয়ন করা৷ সেখানেই তাদের ব্যস্ত থাকা উচিত৷ উন্নয়ন কাজ স্থানীয় সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের৷ ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘একই সঙ্গে গত ১৫ বছর সংসদ সদস্যদের জন্য থোক বরাদ্দ কীভাবে ব্যববহার করা হয়েছে তা তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন কর দরকার৷ আর যদি সংসদ সদস্যদের উন্নয়ন কাজ থেকে দূরে রাখা সম্ভব না হয় তাহলে বাস্তবায়ন থেকে তাদের বাদ রাখতে হবে৷ তারা শুধু পরিকল্পনায় থাকবেন,'' প্রস্তাব ড. ইফতেখারুজ্জামানের৷
কিন্তু সংসদ সদস্যরা মনে করেন, উন্নয়ন কাজে অংশ নেয়া তাদের দায়িত্ব৷ এলাকার সমস্যা এবং সম্ভাবনা সংসদে তুলে ধরা এবং এলাকায় তার সমাধান করার জন্যই জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে৷ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন,‘‘টিআইবির তথ্যে ভুল আছে৷ সংসদ সদস্যরা শুধু পরিকল্পনাই করেন৷ বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা নেই৷ মনে রাখতে হবে যারা জরিপ করেন তাদের কাছে জনগণের কোনো প্রত্যাশা নেই৷ আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা আছে৷''
হারুন অর রশীদও মনে করেন, সংসদ সদস্যদের এলাকার উন্নয়ন কাজের বাইরে রাখার কোনো উপায় নেই৷ তবে তিনি এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হয় বা হয়েছে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে টিআইবির তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি সমর্থন করেন৷