এর চেয়ে খারাপ কী হতে পারতো?
১৯ এপ্রিল ২০২০কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ এবং তা এড়াতে আমরা যে অবস্থায় আছি তার চেয়ে খারাপ কী হতে পারতো? আসুন আমরা ভেবে ভেবে বার করি৷
আজ ১৯ এপ্রিল আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমাদের লকডাউন যথাযথভাবে কাজ করছে না৷ আইসিইউ এর ভেন্টিলেশন কাজ করছে না৷ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখলে আমাদের ভালো হবে৷ ভাবুন, এর চেয়ে কি খারাপ হতে পারতো, এর চেয়ে খারাপ কী হতে পারতো?
এর চেয়ে খারাপ অনুসন্ধান প্রসঙ্গে একটি গল্প বলি৷ একদিন বন্ধুদের আড্ডায় একজন বলে, রাজন সেদিন হঠাৎ অফিস থেকে ফিরে ওর বউকে বন্ধু মোহনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দেখে৷ রাগের মাথায় সে মোহনকে আর নিজের স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করে৷ তারপর হতাশায় ডুবে গিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করে, ওই একই পিস্তলের নল মাথায় ঠেকিয়ে৷ আড্ডায় উপস্থিত সুমন বলে, এর চেয়েও খারাপ হতে পারতো৷ সবাই মিলে চেপে ধরে সুমনকে, এখানে যে তিনজন ইনভলভড তারা সবাই মারা গেছে, এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারতো? সুমন জানতে চায়, ঘটনা কী বারের? গল্পকার বন্ধু বলে মঙ্গলবারের৷ সুমন বলে, তবেই দেখ, রোববারের ঘটনা হলে তো আমিই মারা যেতাম৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জানাজার ছবি দেখে আমরা গতকাল প্রায় সবাই ভিরমি খেয়েছি৷ জেলাটিকে সৌরজগতের আরেকটি গ্রহ বলেছেন, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ৷ জেলাটি নিয়ে গতকাল দিনভর হাসাহাসি কম হয়নি৷ সেইসব হাসি দেখে অনেকে বলেছেন, বাজারে আর ব্যাংকে ভিড় করতে পারলে জানাজায় কেন না? কেউ কেউ আরো আন্তর্জাতিক ভারতের কেরালায় হতে পারলে আমাদের দেশে কেন নয়, ইত্যাদি৷ জ্বি জ্বি সবই ঠিক৷ কিন্তু এতকিছু জেনেও ডাক্তার-নার্স বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, কবরস্থান তালা দেওয়া বা হাসপাতাল হতে না দেওয়ার কাজটি কারা করেন?
সচেতন বন্ধুরা প্রতিদিন বাজারে কেন এত মানুষ আসে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু আমার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে এই আলোচনা করতে দেখছি না যে, ২০০ জনে একটি বাথরুম শেয়ার করে কেমন করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব? ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বেতন না পেয়ে তৈরি পোশাক কারাখানার শ্রমিকেরা কোথায় থাকবেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কোথায় মাথা গুঁজে রাখবেন? তারপরও কেন এই লকডাউন কাকে লক করে রাখতে? আপনাদের যাদের ঘর বাড়ি আছে খাদ্য মজুদ করতে পকেটে টাকা আর ভাঁড়ারে ফ্রিজ আছে তারা ঘরে বসে থাকুন৷ অফিস থেকে অর্জিত ছুটি নেন, টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখুন৷ খেটে খাওয়া মানুষদের কাজ করতে দিন৷ এমনিতেই ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে রাস্তায় ভিড় করে রাখছেন৷
সিলেটের ডা. মঈনের ভায়রা যিনি নিজেও একজন ডাক্তার কোয়ারান্টিন থেকে বলছিলেন, সিলেটে কীরকম অব্যবস্থার শিকার হয়েছিলেন তারা৷ সিলেটেও যদি করোনা রোগীর চিকিৎসা সুবিধা না থাকে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আসতে হয় তবে সারাদেশের মানুষের ঝুঁকি সহজেই অনুমেয়৷ আমরা কী ধরে নিতে পারি না যে, যে কারো পরিণতিই ডা. মঈনের মত হতে পারে? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে শুনে যতটুকু বুঝলাম, আইসিইউ এর ভেন্টিলেশন খুব কাজ করছে না৷ সেখানে ঢোকার নয়জনের মধ্যে আটজনই মারা গেছেন!
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন অথচ কোনো একটি ক্রনিক ডিজিজের কারণে যাকে নিয়মিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, এরকম কাউকে চেনেন? আমি কয়েকজনকে চিনি যারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না৷
আমরা একটু সৃজনশীল হয়ে ভেবে দেখতে পারি, এর চেয়ে খারাপ কী কী হতে পারতো৷ ভাবুন, আমাদের আর অন্যদেরও জানান৷ কারণ, সবচেয়ে খারাপ জানাটাও হয়তো দ্রুত কাজে লেগে যাবে!