সেরা পাঁচ গোল
১৯ জুন ২০১৪১. রবিন ফান প্যার্সি (নেদারল্যান্ডস বনাম স্পেন)
তালিকায় সবার ওপরে নেদারল্যান্ডসের ফরোয়ার্ড ফান প্যার্সিকে রেখেছে রয়টার্স৷ একে তো ম্যাচটা ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে, তার ওপর দলকে সমতায় ফেরাতে এমন অসম্ভব একটা চেষ্টায় ফান প্যার্সি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, যা ভোলা এক কথায় অসম্ভব৷ তখন পেনাল্টি থেকে সাবি আলন্সোর করা (১-০) গোলে পিছিয়ে আছে নেদারল্যান্ডস৷ বাঁ প্রান্ত থেকে উইং ব্যাক ডেলি ব্লাইন্ড-এর ক্রস উড়ে আসতে দেখে ঝড়ের বেগে এগিয়ে গেলেন ফান প্যার্সি৷ চাতুর্যের সঙ্গে এড়ালেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডারদের গড়া ‘অফসাইড ট্র্যাপ'৷ তারপর শরীর শূন্যে ভাসিয়ে অসাধারণ এক ডাইভিং হেড৷ গোল পোস্ট ছেড়ে একটু এগিয়ে আসা ইকার কাসিয়াসের আর স্পেনকে বাঁচানোর সাধ্য ছিল না৷ হল্যান্ডের ‘স্পেন-বধ' সেখান থেকেই শুরু৷ তারপর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের গুনে গুনে আরো চারটি গোল দিয়েছে ডাচরা৷
২. লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা বনাম বসনিয়া)
বিশ্বকাপে আট বছর পর তাঁর আরেকটি গোল৷ আট বছরের বন্ধ্যাত্ব যেভাবে ঘুচালে মনে কিছুটা প্রশান্তি আসে, ঠিক সেভাবেই গোল করে সেদিন আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন মেসি৷ ২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিপক্ষে গোলের পর, গত আসরে শত চেষ্টা করেও একটি গোলও করতে পারেননি আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার৷ তবে এবার প্রথম ম্যাচেই পেলেন গোলের দেখা৷ বসনিয়ার বিপক্ষে সেদিন শুরুতেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা৷ ৬৫ মিনিটে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ঢুকে পড়েন মেসি৷ তারপর গনসালো ইগুয়াইনের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু' করে একটু ফাঁকা জায়গা তৈরি করেই বাঁ পায়ে গোলার মতো শট এবং পোস্ট কাঁপিয়ে বল চলে যায় জালে৷ মেসির ওই গোলের সুবাদেই শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে ম্যাচ জিতেছিল দু'বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা৷
৩. হারিস সেফেরোভিচ (সুইজারল্যান্ড বনাম ইকুয়েডর)
ইনজুরি টাইমে হারিস সেফেরোভিচের দুর্দান্ত এক গোল ইকুয়েডরের বিপক্ষে নাটকীয় জয় (২-১) এনে দেয় সুইজারল্যান্ডকে৷ অবশ্য এ গোলের পেছনে রেফারি রাফশান ইরমাটভের দক্ষ ম্যাচ পরিচালনারও অবদান রয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডের বক্সের কাছে ‘ফাউল' করেছিলেন ইকুয়েডরের এক খেলোয়াড়৷ কিন্তু আঘাত সামলে বল নিয়ে এগিয়ে যান ভালন বেহরামি৷ রেফারি ইরমাটভ তখন ফ্রি কিকের বাঁশি বাজিয়ে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ নষ্ট করেননি৷ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল চলে যায় ইকুয়েডরের বক্সে৷ রিকার্ডো রডরিগেসের ক্রস থেকে বল পেয়ে রক্ষণব্যূহ ভেদ করে বল জালে পাঠিয়ে দেন সেফেরোভিচ৷ এই গোলে অবশ্য সেফেরোভিচের ব্যক্তিগত নৈপুন্যের চেয়ে সুইসদের দলীয় সমঝোতার দ্যূতিই বেশি নজর কেড়েছে৷
৪. ক্লিন্ট ডেমসি (যুক্তরাষ্ট্র বনাম ঘানা)
ম্যাচ শুরু হওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল৷ এর চেয়ে কম সময়েও চারটি গোল হয়েছে বিশ্বকাপে৷ দ্রুততম গোলটি করেছিলেন হাকান সুকুর৷ ২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১১ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন তুরস্কের এই স্ট্রাইকার৷ সময়ের হিসেবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে পঞ্চম দ্রুততম হলেও এবারের আসরে এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে ডেমসির গোলটিকে চতুর্থ সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে রয়টার্স৷ ম্যাচ শুরুর পরপরই একটা থ্রো-ইন পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ থ্রো-ইন থেকে ঘানার বক্সের কাছে বল পেয়ে যান ডেমসি৷ যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক তারপর চোখের পলকেই দু'জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ পায়ে তীব্র শটে বল পাঠান জালে৷ এই গোলের মাধ্যমে আরেকটি রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন ডেমসি৷ দেশের হয়ে এ নিয়ে তিনটি বিশ্বকাপে গোল করলেন তিনি৷
৫. আরিয়েন রবেন (নেদারল্যান্ডস বনাম স্পেন)
স্পেনের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছেন রবেন৷ বিশেষ করে ফান প্যার্সি অবিশ্বাস্য হেডে সমতা ফেরানোর পর ডাচ এই উইঙ্গার মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে গিয়ে যেভাবে গোল করেছিলেন, তার কথা বহুকাল মনে রাখবে ফুটবলামোদীরা৷ নিজেদের প্রান্ত থেকে বল নিয়ে ঘণ্টায় ৩৭ কিলোমিটার বেগে ছুটে যান ৩০ বছর বয়সি রবেন৷ ফিফা বলছে, এর আগে আর কোনো খেলোয়াড় কোনোদিন বল পায়ে এত দ্রুত দৌঁড়ায়নি৷ স্প্রিন্টার ইউসেইন বোল্টের গতিই যেখানে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার, সেখানে ৩৭ কিলোমিটার বেগে ছুটলে রবেনকে আটকাবে কে! এভাবে ছুটতে ছুটতেই ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েন এই ডাচ তারকা৷ তারপর স্প্যানিশ গোলরক্ষক ইকার কাসিয়াসকেও কাটিয়ে পরম মমতায় বল পাঠান জালে৷ এমন গোলের কথা কি সহজে ভোলা যায়?
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স)