‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত, তবে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে'
৩ এপ্রিল ২০১৫চুক্তি হবে, কিংবা হবে না – বারো বছর ধরে এই নিয়ে টানাপড়েন৷ কাজেই এবারেও জগতের চোখ ছিল লোসান-এর ওপর, তার সঙ্গে ছিল আশা-নিরাশার দোলা, সাফল্য আর অসাফল্যের মধ্যে ফারাকটা এতোই সামান্য হতে পারত৷
অবশেষে সুখবরটা এলো – বিশ্বের এমন একটি অঞ্চলের জন্য সুখবর, যেখানকার মানুষ সুখবরে খুব একটা বেশি অভ্যস্ত নন৷ নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, শুধুমাত্র ইরান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের জন্য৷ তবুও লোসান-এর আপোশ সম্পর্কে কিছুটা দ্বিধা পোষণ করলে দোষ নেই৷
বাস্তববুদ্ধির জয়
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক এর আগেও হয়েছে – যেন তাসের খেলা৷ টেবিলের ওপর দু'ধরনের তাস: হয় দু'পক্ষেরই জিত, নয়তো দু'পক্ষেরই হার৷ জিতল শেষ অবধি বাস্তববুদ্ধি৷
লোসান-এর তাসের বাজি যখন শুরু হয়, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও তাঁর ইরানি সতীর্থ মহম্মদ জাভাদ জরিফ, দু'জনেই জানতেন যে, তাঁরা খালি হাতে দেশে ফিরতে পারবেন না৷ যতক্ষণ অবধি না ঐকমত্য অর্জিত হয়, ততোক্ষণ অবধি আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে৷ তাঁরা কি এই বাজি জিতলেন, না হারলেন? জিতলেন – এ কথা নিশ্চয় করে বলা যায়৷
ইরানের পক্ষে জীবন-মরণের প্রশ্ন
ইরানের অর্থনীতি পশ্চিমের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চাপে কাতরাচ্ছে৷ মুদ্রার বিনিময়মূল্য পড়েছে৷ ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে৷ বেকারত্ব ও আশাহীনতা যুব সম্প্রদায়কে চরম হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে৷ তবে ইরানকে শেষমেষ ‘‘হ্যাঁ'' বলতে হয়েছে, কেননা সৌদি আরবের নেতৃত্বে বিভিন্ন আরব দেশের একটি জোট তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হতে পারে, এমন বিপদ দেখা দিয়েছিল৷
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের উপর বিমান আক্রমণের পর সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে পরোক্ষ যুদ্ধ একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ ইয়েমেনে এই আধিপত্যের লড়াই গোটা অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর ক্ষমতা রাখে৷
এবার আসল কাজ
লোসান-এর আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হলে যে বিপক্ষের হাত শক্ত হবে, সেটা ইরান সরকার, এমনকি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর আশেপাশের অতি-রক্ষণশীল মহলেরও অজ্ঞাত ছিল না৷ অপরদিকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু বিরোধের অন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-র পক্ষেও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তাঁর বৃহত্তম সাফল্য বলে পরিগণিত হবে৷
লোসান-চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত ইরানের সঙ্গে পরমাণু বিরোধের অন্ত ঘটল – তবে শুধুই ‘সম্ভবত'৷ নিশ্চয় করে কিছু বলার আগে অনেক কাজ বাকি – কেননা সব কিছু আবার বিনষ্ট করার জন্য চুক্তি-বিরোধীদের হাতে এখনও তিন মাস সময় থাকছে৷ বিরোধীদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম করতে হবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র – বিশেষ করে মার্কিন কংগ্রেসে যখন তাঁর সমর্থকের অভাব নেই৷ স্মরণ করা যেতে পারে, ৪৭ জন মার্কিন সেনেটর তেহরান সরকারকে লেখা চিঠিতে হুমকি দিয়েছেন, ওবামা-শাসনের অন্ত ঘটলেই এই চুক্তিরও অন্ত ঘটবে৷
আঞ্চলিক শক্তিদের মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিশর ইরানের সঙ্গে আপোশের চরম বিরোধী – সেই সঙ্গে স্বয়ং ইরানের কট্টরপন্থিরা, কেননা পরমাণু বিরোধের অন্তের ফলে তেহরান এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব কমতে পারে, এমনকি ইরান আবার আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, যা কট্টরপন্থিদের স্বভাবতই কাম্য নয়৷