পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরীক্ষার ঘরোয়া কিট!
৪ জুলাই ২০২০মারণ ভাইরাসের মোকাবিলার ক্ষেত্রে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যেমন জরুরি, তেমনই এর প্রাদুর্ভাব রুখতে ব্যাপক ভাবে নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে গোড়া থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যত বেশি সম্ভব মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে, তত কমবে এর সংক্রমণের আশঙ্কা। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একাধিক দেশ এই পথে সাফল্য পেয়েছে। আরও একটি কারণে পরীক্ষা জরুরি— অনেক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বাহক ব্যক্তির মধ্যে উপসর্গ থাকছে না। তিনি অজ্ঞাতে অন্যান্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশ নিয়মিত ব্যাপক ভাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে মুশকিল আসান হতে পারে করোনা অ্যান্টিজেন কিট। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের কিট খোলা বাজারে মিলতে পারে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই আটটি সংস্থাকে কিট উৎপাদন ও বিপণনের কথা বলা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই করোনা পরীক্ষার কিট বাজারে চলে আসতে পারে। দাম থাকবে নাগালের মধ্যেই, প্রতিটি সর্বাধিক ৫০০ টাকা।
তৃতীয় বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর পক্ষে কোভিডের মোকাবিলা সহজ কথা নয়। সরকারি পরীক্ষণাগারে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করার জন্য পরীক্ষা চলছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতেও শুরু হয়েছে এই পরীক্ষা। কিন্তু কেউ চাইলেই এই পরীক্ষা করাতে পারছেন, এমন নয়। তার উপর রয়েছে রোগজনিত ভীতি এবং সমাজের একঘরে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। অনেকের মত, এসব ঝক্কি থেকে মুক্তি দেবে নয়া কিট। কোনও ব্যক্তি বুঝতে পারবেন তিনি মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত কি না। একইভাবে ব্যাপক সংখ্যায় নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা মোকাবিলার লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হবে, যদি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে এই ধরনের পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এই ধরনের কিট বাজারে আসতে পারে যার সাহায্যে যে কেউ করোনা নির্ণয় করতে পারেন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার হাজার দশেক কিট কিনেছে। সেগুলি ব্যবহার করা হবে পরীক্ষামূলকভাবে। পুরো প্রক্রিয়ায় চলছে আইসিএমআর-এর নির্দেশ মেনে। রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সাড়ে ৪০০ টাকা দাম হবে একটি কিটের। একাধিক সংস্থা বাজারে বিক্রি করলে প্রতিযোগিতার ফলে দাম কমবে, গুণগত মানও ভালো থাকবে। প্রথমে কিট পাঠানো হবে সরকারি হাসপাতালে। এরপর সেই সব এলাকায়, যেখানে করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এখানে মান পরীক্ষা করে রাজ্য সরকার খোলা বাজারে অ্যান্টিজেন কিট বিক্রির অনুমতি দেবে।
যদিও বিষয়টা এত সহজ নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার-এর রাজ্য সম্পাদক অংশুমান মিত্রের বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে বসে কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা সহজ নয়। এই নমুনা নির্ভুলভাবে সংগ্রহ করতে পারেন নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ লাগে। বাজারে কিট পাওয়া গেলেও বাড়িতে কে নমুনা সংগ্রহ করবেন? করোনার মূল পরীক্ষাতেই নমুনা ঠিক না নেওয়া হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বাড়ির ক্ষেত্রেও নমুনা ঠিক না হলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না।’’ অনেক চিকিৎসকের মতে, এই প্রক্রিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকবে। যে কিটে লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হল, সেটা ঠিকভাবে বর্জ্য হিসেবে পরিত্যক্ত না করা গেলে তা থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া ঘরোয়া কিটে সাফল্য পাওয়া কঠিন।
রিয়েল টাইম টিপিসিআর পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ নির্ণয়কে সর্বোৎকৃষ্ট মনে করা হয়। ঘরোয়াভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও তার মাধ্যমে একজন রোগীকে করোনা মুক্ত হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল। উপসর্গ থাকলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটিপিসিআর পদ্ধতি অবলম্বন করতেই হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।