ভ্রূণ হত্যা ঠেকাতে অভিনব উদ্যোগ
২৩ মার্চ ২০১৭‘মেয়ে হয়েছে!’ কেবল এই দু'টো শব্দ ১০ বছর আগে জয়ার হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছিল৷ কেননা তাঁর স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্যরা একজন পুত্র সন্তান কামনা করছিলেন৷ তাই মেয়ে হওয়ার পর জয়াকে হাসপাতালে দেখতে আসেনি পরিবারের কেউ৷ বাড়ি ফেরার পরও তাঁকে শাস্তি পেতে হয়৷ কয়েক মাস ধরে তাঁর ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন ও হয়রানি৷ শেষে অস্ত্র হিসেবে স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন জয়ার ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে৷ ঝলসে যায় জয়ার মুখ, ক্ষতবিক্ষত হয় ঘাড় এবং বুক৷ এমনকি জয়াকে আইনত মৃত দেখাতে ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত তৈরি করে ফেলে তাঁরা৷
এ মুহূর্তে পুনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয়া জানান, ‘‘কখনো কখনো মনে হয় একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে জীবনে হয়ত এত অশান্তি থাকতো না৷ জীবনটা হয়ত অন্যরকম হতো৷’’
জয়ার এই ঘটনাই প্রমাণ করে ভারতে পুত্র সন্তানের কতটা চাহিদা বা প্রাধান্য রয়ে গেছে আজও৷ আর এর ফলেই ঘটে চলেছে কন্যা ভ্রুণ হত্যা৷ সরকার নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে জন্মের আগে গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ না করা হয়, হত্যা করা না হয় কন্যা ভ্রুণ, কিন্তু তারপরও দেশজুড়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ মার্চ মাসেই পুনের দক্ষিণে একটি হাসপাতালের কাছ থেকে গর্ভপাত করানো ১৯টি কন্যা ভ্রুণ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
বলা বাহুল্য, এভাবে কন্যা ভ্রুণ হত্যার ফলে ভারতের পুরুষ ও নারীর অনুপাতে পার্থক্য দেখা দিয়েছে৷ ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০০০ জন ছেলের বিপরীতে মাত্র ৯২৭টি মেয়ের জন্ম হয়েছিল ভারতে৷ আর ২০১৬ সালে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি হাজারে মাত্র ৯১৮টি মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ভারতে৷
এই পরিসংখ্যানই ডা. গনেশ রাখের যেন টনক নড়িয়ে দিয়েছে৷ পরিস্থিতি যে আসলে কতটা ভয়াবহ, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন৷ এই চিকিৎসকই জয়ার চিকিৎসা করছেন৷ তিনি জানান, যখনই অন্তঃসত্ত্বা নারীরা প্রসবের জন্য হাসপাতালে আসেন, তাঁর সব আত্মীয়স্বজনই আশা করে থাকেন যে ছেলে হবে৷ যদি ছেলে হয় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, মিষ্টি বিতরণ করা হয়৷ কিন্তু মেয়ে হলে আত্মীয়স্বজনদের দেখাই পাওয়া যায় না৷ এ থেকেই তিনি নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি, যার নাম ‘কন্যা শিশুদের রক্ষা করতে প্রচারণা’৷ ২০১২ সালের শুরু থেকেই এর জন্য কাজ করছেন তিনি৷ কোনো নারী কন্যাসন্তান প্রসব করলে হাসপাতালে কোনো অর্থ দিতে হয় না আর৷ শুধু তাই নয়, কন্যাসন্তানের জন্মের পর হাসপাতালের কর্মীরাই কেক এবং মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন৷
প্রচারণা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫০০টি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে এই হাসপাতালে৷ এমনই এক কন্যাসন্তানের মা চান্দাবাই জানান, ‘‘এই হাসপাতালে এসে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে৷ আমার মেয়ে অশ্বীনীর মেয়ে, মানে আমার নাতনি হওয়ায় এখন তাই আমরা খুব খুশি৷ তাছাড়া হাসপাতাল থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ শিখছে অনেকে৷ এই হাসপাতালে কোনো মেয়ের জন্ম হলেই হাসপাতালের কর্মীরা মাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান৷ মেয়ে হওয়ার জন্য কেকও কাটা হয়৷ জানানো হয়, মেয়ে হওয়াটাও একটা উৎসবের কারণ বৈকি!’’
সোনিয়া ফালনিকার (পুনে)/এপিবি
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...