‘করোনা পরীক্ষায় বাংলাদেশের কিট অনেক আলাদা'
২৫ মার্চ ২০২০করোনা ভাইরাসের র্যাপিড টেস্ট কিট ‘গণস্বাস্থ্য র্যাপিড ডট ব্লট' আবিস্কার করেছেন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল৷ এখন সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তার গবেষণা দলে সঙ্গে রয়েছেন তিনি৷ কিট সরকারে হাতে তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন বলে জানান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আজ-কালের মধ্যে কাঁচামাল এসে যাবে৷ সরকারের আন্তরিক সহায়তায় সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে৷ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এই কিট আমরা দিতে পারবো৷’’
সার্স ভাইরাস পরীক্ষার কিটের পেটেন্ট ড. বিজন কুমারের নিজের৷ ২০০৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিতে চাকুরি করার সময় এই কিট আবিস্কার করেন৷ ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস তৈরি করে তা থেকেই টেস্টিং কিট তৈরি করা হয় তখন৷
এবারও ল্যাবরেটেরিতে তৈরি করোনা ভাইরাসের একটি পার্টিকেল থেকে টেস্টিং কিট তৈরি হচ্ছে৷ তবে বাংলাদেশে ওই মানের ল্যাবরেটরি না থাকায় সেটা এখানে সম্ভব হচ্ছে না৷ যুক্তরাজ্য থেকে কাঁচামাল আনা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার আমরা যে পার্টিকেল আনছি সেটা নিরাপদ, বয়োলোজিক্যাল হ্যাজার্ড ফ্রি৷’’
ড. বিজন কুমার বলেন, ‘‘যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অন্যদিকে আরো অনেক দেশ কিট উৎপাদনের জন্য এই কাঁচামাল চায়৷ তাই চাহিদা অনেক৷ তবে আমরা কাঁচামাল পাচ্ছি এটাই আশার কথা৷’’
কিভাবে এই কিট আবিষ্কার করেছেন সেই কাহিনি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালের সার্স ভাইরাস আর এখনকার যে কোভিড-১৯ (করোনা)-এর বেশ মিল আছে৷ ৮০ ভাগ মিল আছে৷ ওটা ছিল সার্স করোনা ভাইরাস-১ এবং এখনকারটা সার্স করোনা ভাইরাস-২৷ নাম দেয়া হয়েছে কোভিড৷ আমি সিঙ্গাপুরে ল্যাবরেটরিতে এই ভাইরাসটি নিজে গ্রো করিয়ে কাছ থেকে দেখেছি, যেটা এই মুহূর্তে ভাবলে ভয় লাগে৷’’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের দাবি, ‘‘বিশ্বে করোনা টেস্টের কিট আরো আছে৷ কিন্তু আমাদেরটা তাদের চেয়ে আলাদা, ইউনিক৷ আমাদের এই কিটের বৈশিষ্ট্য হলো, এটা কোনো পজেটিভ কেসকে বাদ দেবে না৷ এটাই মূল সাফল্য৷ কারণ, টেস্টে পজেটিভ কেস বাদ পড়লে করোনা ছড়িয়ে পড়ে৷ আর অন্যান্য র্যাপিড কিটে ব্লাড দিয়ে করে৷ আমাদেরটা হলো ডট ব্লট৷ রক্তের সিরাম থেকে করা হয়৷ খুবই সেনসিটিভ এবং ১৫ মিনিটে ফল পাওয়া যাবে৷ তবে আমাদের যদি ল্যাবরেটরি থাকত, আমরা যদি ভাইরাসটা এখানের ল্যাবরেটরিতে গ্রো করে কাঁচামাল তৈরি করতে পারতাম তাহলে অনেক বেশি আশাগ্রস্ত হতে পারতাম৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন করোনার মূল সমস্যা হচ্ছে আতঙ্ক৷ আর এখন ফ্লুর সিজন৷ মানুষ সর্দি-কাশি হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন৷ আমরা প্রাথমিকভাবে এক লাখ বা আরো যত বেশি পারি তৈরি করব৷ ফলে মানুষ টেস্ট করাতে পারবে৷ ফলে আতঙ্ক কেটে যাবে৷ আতঙ্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷’’
তিনি জানান, ‘‘করোনা ভাইরাস এখন আমাদের পরিবেশে ‘অ্যাডাপ্টেশন’ পর্যায়ে আছে৷ তবে আমাদের তাপমাত্রাও বাড়ছে৷ বেশি তাপমাত্রায় ভাইরাসটি বেশিক্ষণ টিকতে পারে না৷ আক্রান্ত কেউ খুব কাছে থেকে হাঁচি বা কাশি না দিলে এটা ছড়ায় না৷ খুব দূরে ভাইরাসটি যায় না৷ তাই আশা করি, আমরা হয়ত ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারব৷’’
ড. বিজন কুমার বলেন, ‘‘আমাদের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে হবে৷ মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে৷ আমার আবিস্কৃত এই কিট যদি মানুষের উপকারে লাগে, আমি খুশি হবো৷ আমার জন্ম স্বার্থক হবে৷’’
তাঁর সঙ্গে করোনা র্যাপিড টেস্ট কিট তৈরির কাজে আরো যুক্ত আছেন: ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রঈদ জমির উদ্দিন ড. ফিরোজ আহমেদ এবং সিংগাপুরের একজন গবেষক৷
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেনারি মেডিসিনে মাস্টার্স করা বিজন কুমার ডক্টরেট করেছেন ইংল্যান্ডের সারে ইউনিভার্সিটি থেকে, ১৯৯১ সালে৷ সেখানে ১০ বছর কাজ ছ ২০০২ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন৷ সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভাইরোলজি বিভাগে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি৷ গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানীও ড. বিজন কুমার৷ তার স্ত্রীও একজন ভেটেনারি ডাক্তার৷