করোনার সময় কে আর গাড়ি কিনছে!
বছরের প্রথম তিন মাসেই গাড়ির বিক্রি কমে গিয়েছিল৷ করোনা সংকটের ফলে ডাইমালার ও রেনো-র মতো কোম্পানি বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে৷ তবে ধীরে ধীরে উৎপাদন আবার শুরু হচ্ছে৷
বিশাল অঙ্কের লোকসান
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ডাইমলার কোম্পানির লাভ ৭৮ শতাংশ কমে গেছে৷ এখনো ঝুলিতে ৬১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো থাকলেও কোম্পানির দূশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না৷ কোম্পানির কর্মকর্তা হারাল্ড ভিলহেল্ম বলেন, আপাতত বকেয়া মেটাতে নগদ অর্থের জোগানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ করোনা সংকটের কারণে বাজারের চাহিদা, যন্ত্রাংশের সরবরাহ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷
বিশ শতাংশ লোকসান
ডাইমলার কোম্পানির ট্রাকের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ গোটা বিশ্বে বছরের প্রথম তিন মাসে ট্রাকের বাজার প্রায় ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে৷ একই সময় মার্সিডিজ গাড়ির বিক্রিও প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে৷ মার্চ মাসে গাড়ির দোকান ও কারখানা বন্ধ হলেও তার আগেই লোকসান টের পাওয়া যাচ্ছিল৷
অচলাবস্থার পর আশার আলো
প্রায় চার সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে ডাইমলার কারখানায় আবার উৎপাদন শুরু হয়েছে৷ ৬ই এপ্রিল থেকে শ্রমিক-কর্মীদের মজুরি ও বেতন মেটাতে সরকারি ভরতুকি শুরু হয়েছে৷ আপাতত এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু থাকবে৷ জার্মানিতে কোম্পানির প্রায় এক লাখ সত্তর হাজার কর্মীর প্রায় ৮০ শতাংশ কোনো না কোনো ভাবে সংকটের শিকার হয়েছেন৷
প্রথম সুখবর
চীনে ডংফেং হোন্ডা কোম্পানির কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে৷ গাড়ির বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে, ধীরে ধীরে এমন আশা দেখা যাচ্ছে৷ মার্চ মাসে চীনে গাড়ির চাহিদা প্রায় ৪৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷ ফেব্রুয়ারি মাসে সেই মাত্রা ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ৷ চীনে ডাইমলার কোম্পানির প্রায় সব কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়েছে৷
কারখানায় আবার কাজ শুরু
ফোল্কসভাগেন কোম্পানিও ধীরে ধীরে উৎপাদন শুরু করছে৷ প্রায় পাঁচ সপ্তাহের বিরতির পর বৃহস্পতিবার থেকে স্ভিকাউ শহরের কারখানায় ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছে৷ সেখানে গত নভেম্বর মাস থেকে আইডিথ্রি মডেলের ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন করা হচ্ছে৷ কেমনিৎস শহরে কোম্পানির ইঞ্জিন তৈরির কারখানাও উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে৷
ফোল্কসভাগেন কোম্পানির সদর দপ্তর
ভল্ফসবুর্গ শহরে ফোল্কসভাগেনের বিশাল কারখানায় ২৭শে এপ্রিল থেকে আবার কাজ শুরু হচ্ছে৷ এমডেন ও হানোফার শহরেও উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি ও আরো ঘনঘন সাফাইয়ের মাধ্যমে শ্রমিক ও কর্মীদের জন্য কাজের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে এই কোম্পানি৷ কারখানার যেসব অংশে নির্ধারিত দেড় মিটার ব্যবধান বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেখানে শ্রমিকরা মাস্ক পরে কাজ করবেন৷
মূলধন ফুরিয়ে আসছে
ফ্রান্সের গাড়ি কোম্পানি রেনো-ও করোনা সংকটের ফলে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে৷ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে গাড়ি বিক্রি প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে গেছে৷ ফলে টার্নওভারও প্রায় ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে৷ রেনো কোম্পানির নগদ অর্থের ভাণ্ডারও সঙ্কুচিত হচ্ছে৷
স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎপাদন
ফ্রান্সে রেনো কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বী পেজো ও সিত্রোয়েনের অবস্থাও ভালো নয়৷ পিএসএ কোম্পানির অধীনে এই দুই ব্র্যান্ডের উৎপাদন প্রায় ২৯ শতাংশ কমে গেছে৷ অন্যান্য গাড়ি কোম্পানির মতো পিএসএ-ও ইউরোপের কারখানাগুলিতে আবার উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ শ্রমিক ও কর্মীদের জন্য কড়া স্বাস্থ্যবিধির ভিত্তিতে পরিকল্পনা চলছে৷
সংকটের কেন্দ্রস্থল
দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপে করোনা সংকটের ভরকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশ ইটালিতে ৪ঠা মে থেকে কারখানা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে৷ ফিয়াট ক্রাইসলার কোম্পানিও সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এই কোম্পানিও মারাত্মক লোকসানের মুখ দেখছে৷ মার্চ মাসে বিক্রি প্রায় ৭৬ শতাংশ কমে গেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলিতে মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গেছে৷