করোনায় বাড়ছে হিংসা
১৪ এপ্রিল ২০২০দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনচলছে ভারতে। দিকে দিকে চাকরি যাচ্ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের। গরিবের হাতে কাজ নেই। এর মধ্যেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারের ফলে এক শ্রেণির রাগ এবং হতাশা চরমে পৌঁছেছে। তারই পরিণামে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা সমাজের ভয়াবহ দিকটা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
দুই দিন আগে পাঞ্জাবের পাটিয়ালায় পাইকারি বাজারে নিহাং শিখেদের একটি দল গাড়ি নিয়ে যায়। পুলিশ পাস দেখতে চাইলে গাড়ি নিয়ে সোজা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে তারা। তারপর চারজন গাড়ি থেকে নেমে তলোয়ার দিয়ে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টরের হাত কেটে দেয়। আরও দুই জন পুলিশ কর্মী আহত হন। তারপর গাড়ি নিয়ে তারা কাছেই একটি নিহাং গুরুদ্বারে ঢুকে যায়। পুলিশ পরে সেখান থেকে বারো জনকে গ্রেফতার করে।
দিল্লির বদরপুরে প্রবীণ বব্বর নামে একজন বাসিন্দা সবজিওয়ালার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান। কিন্তু সবজিওয়ালার কছে পরিচয়পত্র ছিল না। তিনি জানান, তাঁর নাম মহম্মদ সেলিম। সেটা শুনেই তাঁকে রড দিয়ে পেটাতে শুরু করেন ওই প্রবীণ। তারপর তাঁকে বলা হয়, পরিচয়পত্র ছাড়া তিনি যেন ওই এলাকায় না ঢোকেন। পরে পুলিশ প্রবীণকে গ্রেফতার করে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাউকে আইন নিজের হাতে নিতে দেওয়া হবে না।
দিল্লিতে এখন অন্য অপরাধ কমলেও বেড়ে গিয়েছে বাড়িতে মেয়েদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা। ২৩ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের ২৫৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। নির্যাতিতা মেয়েরা অন লাইনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ৬৯টি মামলা গার্হস্থ্য হিংসার, ৭৭টি মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের অধিকার লঙ্ঘনের, ১৬টি পুলিশের ব্যবস্থা না নেওয়া নিয়ে। বাকি অভিযোগগুলি নানা ধরনের অত্যাচারের। এর আগের সাতদিনে ১১৬টি এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছিল। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, করোনার জন্য লকডাউনের ফলে মেয়েদের ওপর হিংসার পরিমাণ বেড়েছে।
মনোসমাজবিদ মোহিত রণদীপ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই ধরনের সংকটযখন তৈরি হয়, তখন মানুষের মধ্যে বেপরোয়া ভাব তৈরি হয়। আসলে তখন মানুষ নিজেকে অসুরক্ষিত বলে মনে করে। এই সব ঘটনা ওই মনোভাবের ফলে ঘটে। তখন তাঁদের একমাত্র রাষ্ট্র ভরসা দিতে পারে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতারা মুখে আশ্বাস দেন, কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটে। তখন লোকের বেপরোয়া ভাব আরও বেড়ে যায়।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)