করোনায় মানুষের চলাফেরায় গুগলের নজরদারি
করোনার সময় মানুষ কোথায় কোথায় যাচ্ছেন? তার হিসেব করেছে গুগল৷ সম্প্রতি একটি ‘কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে তারা, যেখানে উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের তথ্য৷ আছে বাংলাদেশেরও৷
কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট
কেনাকাটা ও বিনোদন, মুদি দোকান ও ফার্মেসি, পার্ক, বাস-ট্রেন স্টেশন, কর্মক্ষেত্র এবং বাসায় মানুষের যাতায়ত ও অবস্থানে কতটা পরিবর্তন ঘটেছে সেই তথ্য বের করেছে গুগল৷ এজন্য বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লোকেশন ডেটা ব্যবহার করেছে তারা৷ সবশেষ ডেটাকে তুলনা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে৷
বিনোদন, কেনাকাটায় ভাটা
রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, লাইব্রেরি এবং মুভি থিয়েটারগুলো রয়েছে এই ক্যাটাগরিতে৷ ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত বা গতিশীলতা ৭৬ ভাগ কমেছে৷ ভারতে কমেছে ৮০ ভাগ, নেপালে ৭৭ ভাগ আর পাকিস্তানে ৬৫ ভাগ৷
দোকানে যাতায়ত কমেছে অর্ধেক
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার, খাদ্য গুদাম, কৃষি বাজার, ওষুধের দোকানে বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত আগের চেয়ে ৫৫ ভাগ কমে গেছে৷ একই হারে কমেছে ভারতেও৷ নেপালে কমেছে ৬৮ ভাগ, পাকিস্তানে ৪৭ ভাগ৷
পার্কে বেড়ানো কমেছে
জাতীয় উদ্যান, সমুদ্র সৈকত, নগর চত্বর, কিংবা পার্কগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ৷ এপ্রিলে এসে ফেব্রুয়ারির তুলনায় তা কমেছে ৩৪ ভাগ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে ৫৫ ভাগ, ভারতে ৫২ ভাগ, পাকিস্তানে পার্কে বেড়ানোর প্রবণতা কমেছে ৩৬ ভাগ৷
যোগাযোগ কমেছে তিন চতুর্থাংশ
বাংলাদেশে বাস, রেল স্টেশনের মত যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ৭২ ভাগ কমে গেছে৷ প্রায় একই হারে কমেছে ভারত ও নেপালেও৷ তবে পাকিস্তানে এই হার হ্রাস পেয়েছে ৫৫ ভাগ৷
কাজে যাচ্ছে না মানুষ!
বাংলাদেশে ২৭ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে৷ এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে মানুষের গতিশীলতা ৫৮ ভাগ কম ছিল৷ ৪৮ থেকে ৬৪ ভাগ গতিশীলতা কমেছে ভারত, পাকিস্তান, নেপালেও৷
বাসায় থাকার প্রবণতা বেড়েছে
ছুটি আর বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে৷ গৃহস্থলে থাকার হার এই এক মাসে ২৫ ভাগ বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে ৩০ ভাগ বেড়েছে ভারতে, ১৯ ভাগ পাকিস্তানে আর ২১ ভাগ নেপালে৷
গতিশীলতা ব্যাপক কমেছে ইউরোপে
ইউরোপের কোভিড ১৯ এ বেশি আক্রান্ত দেশগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ব্যাপক হারে কমেছে৷ স্পেন, ইটালি, ফান্সে দোকান ও বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়ত হ্রাস পেয়েছে ৮৬ থেকে ৯০ ভাগ৷ এসব দেশের মানুষ এমনকি পার্কে ভ্রমণও আগের চেয়ে আশিভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷
যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রা বদলেছে কম!
পৃথিবীতে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সংক্রমণে উপরের দিকে থাকা দেশগুলোর তুলনায় তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন কমই ঘটেছে৷ ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে ৪৫ ভাগ কমেছে কেনাকাটা বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়া, পার্কে যাতায়ত কমেছে ১৬ ভাগ৷ আর যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের চলাচল ছিল আগের চেয়ে ৪৯ ভাগ কম৷
পার্ক ভ্রমণ বেড়েছে জার্মানিতে
জার্মানিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ লকডাউন করা না হলেও দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রয়েছে বিধিনিষেধ৷ মানুষ এই সময়ে দোকান, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কমাননি পার্ক ভ্রমণ৷ বরং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৩৫ ভাগ বেড়েছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের বাসিন্দারা এমনকি আগের চেয়েও ৭৭ ভাগ বেশি সময় কাটাচ্ছেন পার্কগুলোতে৷
ফয়সাল শোভন (কোভিড-১৯ কমিউনিটি মোবিলিট রিপোর্ট, গুগল)