1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্মহীনতা নিয়ে সংকটে জার্মানি

৩ মার্চ ২০১৮

সম্প্রতি ইউরোস্ট্যাট নামক একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর রিপোর্ট নিয়ে আলোড়ন ছড়িয়েছে জার্মানিতে৷ দেখা যাচ্ছে কর্মহীনতা এবং দারিদ্র্যের সূচকে জার্মানির অবস্থান বেশ সংকটে৷ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও৷

https://p.dw.com/p/2tWoX
ছবি: picture alliance/dpa/S. Pilick

আপাতদৃষ্টিতে জার্মানিকে ধরা হয় পৃথিবীর বিত্তশালী দেশগুলির অন্যতম৷ মাথাপিছু রোজগারের পরিমাণও এখানে যথেষ্ট বেশি৷ কিন্তু সম্প্রতি ‘ইউরোস্ট্যাট' নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের রিপোর্টে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জার্মান সরকারেরও৷ রিপোর্টে প্রকাশ, জার্মানিতে কর্মহীন মানুষ ক্রমশ দারিদ্রসীমার নীচে চলে যাচ্ছে৷ শতাংশের নিরিখে সংখ্যাটি চিন্তায় ফেলার মতোই৷ ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ৷ বাকি ইউরোপে যা ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ৷

রিপোর্ট অনুযায়ী জার্মানির পরেই এই সমস্যায় ভুগছে লিথুয়ানিয়া৷ কিন্তু সেখানে কর্মহীন মানুষের দারিদ্র্যমার নীচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে, এই সংকট অনেক কম ফ্রান্স, সাইপ্রাস কিংবা ফিনল্যান্ডে৷ সর্বত্রই শতাংশের অনুপাতে সংখ্যাটি হলো ৪০ শতাংশের নীচে৷ বস্তুত, ইউরোস্ট্যাট-এর মন্তব্য, সংখ্যাটি ৪০ শতাংশের নীচে থাকলে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই৷

প্রশ্ন হলো, জার্মানিতে কেন এমনটা ঘটছে, যেখানে পরিসংখ্যান বলছে জার্মানির অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি করছে! ইউরোস্ট্যাট-এর বক্তব্য, জার্মানিতে জিনিসের যা দাম, তার সঙ্গে কর্মহীন মানুষেরা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না৷ মনে রাখা দরকার, জার্মানি এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ওয়েলফেয়ার স্টেট বা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র৷ কর্মহীন মানুষেরা এই দেশগুলিতে সরকারের কাছ থেকে অর্থসাহায্য পান৷ চাকরি যাওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে জার্মানিতে বসবাসকারী মানুষেরা তাঁদের বেতনের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পান৷ সন্তান থাকলে তা ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায়৷ তবে ক্রমশ এই অর্থের পরিমাণ কমতে থাকে৷ বহুদিন কর্মহীন মানুষেরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে মাসে ৪১৬ ইউরো পান৷ পাশাপাশি বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধাও পান৷ কিন্তু মনে করা হচ্ছে, এই পরিমাণ অর্থ জার্মানিতে বেঁচে থাকার পক্ষে যথেষ্ট নয়৷ এবং সে কারণেই কর্মহীন গরিব মানুষেরা ক্রমশ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যাচ্ছেন৷

বহুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন একটি সমাজসেবী সংগঠনের সদস্য উলরিখ শ্নাইডার৷ তাঁর মতে, ২০০৫ সাল থেকে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে জার্মানি যে নীতি অবলম্বন করছে, তারই ফলাফল এটি৷ বস্তুত, অদূর ভবিষ্যতে সমস্যাটি আরো চরম আকার ধারণ করবে বলেই তাঁর বিশ্বাস৷ এবং এর জন্য আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকারকেই দোষ দিচ্ছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য বিষয়টি খুবই জটিল৷ গত কয়েক দশকে জার্মানিতে বহুক্ষেত্রেই বেতনের পরিমাণ কমেছে৷ পাশাপাশি জীবনবীমার নিয়মকানুনও অনেক বদলেছে৷ যা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পরিপন্থি৷ এখন আর বিনামূল্যে চশমা তৈরি করা যায় না৷ চিকিৎসাক্ষেত্রেও গরিব মানুষ নানা অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন৷

বস্তুত, গার্ডিয়ান পত্রিকায় মাসখানেক আগে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল৷ সেখানে বলা হয়েছিল, ব্রিটেন সহ গোটা ইউরোপই কর্মহীনতা এবং দারিদ্র নিয়ে সংকটে৷ অক্সফোর্ডের কয়েকজন বাম মনোভাবাপন্ন অর্থনীতিকের একটি নতুন তত্ত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল সেই রিপোর্টে৷ যাঁদের বক্তব্য, সামাজিক সুরক্ষার অর্থ যদি খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া যায় এবং যদি দেশের প্রত্যেকটি পরিবারের কাছে সামাজিক সুরক্ষার একটি অর্থ পৌঁছে দেওয়া যায় প্রতি মাসে, তাহলে দারিদ্র এবং কর্মহীনতার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে ইউরোপ৷ ফিনল্যান্ডের সরকার সেই তত্ত্বের আংশিক গ্রহণ করেছিল এবং কর্মহীন এবং বৃদ্ধদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার অর্থ অনেকটাই বৃদ্ধি করেছিল৷ ফলও মিলেছিল হাতেনাতে৷ দেখা গিয়েছিল, উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যবসায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই৷ যার ফলে পরিবারগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে৷ কেবলমাত্র সামাজিক সুরক্ষার অর্থের উপর তাদের আর নির্ভর করতে হচ্ছে না৷ ইউরোস্ট্যাট-এর সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, ফিনল্যান্ড কর্মহীন এবং দারিদ্রসীমার সূচকে খুবই ভালো জায়গায় রয়েছে৷

ইউরোস্ট্যাট-এর রিপোর্ট জার্মানির বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলির হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে৷ ম্যার্কেলের অর্থনৈতিক ভাবনাকে অনেকেই তুলোধোনা করছেন৷ বামপন্থি নেত্রী কাটজা কিপিং বলেছেন, ইউরোস্ট্যাটের রিপোর্ট জার্মান সরকারের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে৷

ইউরোস্ট্যাট-এর রিপোর্ট সাড়া ফেলেছে পূর্বের দুনিয়াতেও৷ সমীক্ষা রিপোর্টটি দেখে পূর্বের বহু অর্থনীতিবিদই বলছেন, পশ্চিমে এখনো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণাটি আছে৷ তারপরেও এত সংকট৷ পূর্বের দেশগুলিতে সামাজিক নিরাপত্তার ছিঁটেফোঁটাও নেই৷ অথচ কর্মহীনতা এবং দারিদ্র সেখানে আরো বড় সংকট৷ এ ধরনের রিপোর্ট দেখলে বোঝা যায়, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে দরিদ্র মানুষ কী চরম সংকটে আছেন৷

বেন নাইট/এসজি (গার্ডিয়ান)

এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷