কলকাতার মানুষ যেভাবে ট্রাফিক ও পরিচ্ছনতার বিধি ভাঙেন
কলকাতার রাস্তায় হামেশাই দেখা যায় ট্রাফিক আইন মানা হচ্ছে না। বাসচালক, পথচারী থেকে শুরু করে সকলেই আইন ভাঙেন।
জরিমানার নোটিশ
কলকাতার মানুষ হামেশাই এমন কাজ করেন, শহরের পরিচ্ছনতা, অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। তারা নিজের অজান্তে অথবা ইচ্ছে করেই কিছু বিধি লঙ্ঘন করেন। নাগরিক আচরণকে সুশৃঙ্খল করতে ‘কর্তৃপক্ষকে’ দেওয়ালে নোটিশ দিয়ে জরিমানার নিদান দিতে হয়। তাতে কি কাজ হয়?
হাসপাতালে গিয়ে মানুষ যা করছেন
‘থুতু ফেললে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা হবে’ জানার পরেও কিছু মানুষ পানমশলা, গুটখা চিবিয়ে নিজের চারপাশ এইভাবে নোংরা করে রাখেন। তারা একবারের জন্যও ভাবেন না, এরফলে শুধু দৃশ্যদূষণ হয় না, জায়গাটা শুধু নোংরাই হয় না, তাদের এই কাজ অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। ওপরের ছবিটি একটি হাসপাতাল চত্বরের।
শৌচালয় থাকা সত্ত্বেও
কলকাতা শহরের প্রায় সব জায়গাতেই সুলভ শৌচালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্বেও দেখা যায় বহু মানুষ যত্রতত্র রাস্তাতেই মূত্রত্যাগ করেন। এই অপরাধকে এখনও গৌণ বলেই মনে করা হয় বলেই হয়ত প্রশাসনের তরফ থেকে সেভাবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অনেকের মতে সারা শহর জুড়ে শৌচালয়ের পরিকাঠামো সেভাবে গড়ে তুলতে পারেনি প্রশাসন, তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এইসব বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কড়া হতে পারে না সরকার।
হেলমেট নিয়ে
কলকাতা শহরে বাইক আরোহীর হেলমেট না পরার ক্ষেত্রে পুলিশ কড়া মনোভাব দেখালেও স্থান ও কাল হিসেবে তা ঢিলেঢালা থাকে। দেখা গেছে সকালের দিকে পড়ুয়ারা যখন স্কুলে যায় তখন হেলমেট না পরা থাকলেও পুলিশ ‘ক্ষমাশীল’ হয়ে ওঠে। ওপরের ছবিতে এক অভিভাবক বাচ্চাদের বাইকে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছতে যাচ্ছেন।
দ্রুতগতির রাস্তাতেও
ভিআইপি রোডের মত গতিশীল রাস্তাতেও হেলমেট হীন বাইক আরোহী দেখা যায়। ‘স্থানীয় মানুষ’ পরিচয়ে পারও পেয়ে যায় তারা। ছবিটি কলকাতা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ভিআইপি রোডের। একটি বাইকে তিনজন আরোহী, যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ এবং তিনজনের মাথাতেই হেলমেট নেই।
রক্ষক যেখানে আইনভঙ্গকারী
অনেককেই দেখা যায় পদাধিকার বলে আইন লঙ্ঘন করার একটা ছাড়পত্র নিজেই নিজেকে দিয়ে দেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে খোদ এক পুলিশকর্মী বাইকে আরেকজনকে বিনা হেলমেটে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি পুলশকর্মীর মাথার হেলমেটটিও বিধিসম্মত নয়।
ওভারলোডেড গাড়ি
ওভারলোডেড’ পণ্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্বেও আইনকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে নির্ভয়ে শহরের বুকে দাপিয়ে বেড়ায় এই অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়িগুলি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ট্রাফিকপুলিশের সঙ্গে এইসব গাড়িগুলির মাসোহারা বন্দোবস্ত করা থাকে। একেক এলাকার একেক ব্যবস্থা। সেই ভরসাতেই এরা অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই করার সাহস পায়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কতটা বিপজ্জনক ভাবে গাড়িটি পণ্যবোঝাই করেছে।
শিশুশ্রমিকরা কাজ করে
শিশুশ্রম বেআইনি। কেবল বেআইনিই নয়, কড়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু কলকাতা শহরেই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিশুশ্রমিক চোখে পড়ে। শিশুদের দিয়ে অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেওয়া যায় বলে আইনের ভয় থাকলেও লোভ সামলাতে পারেন না মালিকেরা। অনেকক্ষেত্রে মানবিক কারণেও শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে বলে দাবি মালিকদের।
আইনভঙ্গকারী বাস ও অটো
মজা করে অনেকে বলেন, বিধি লঙ্ঘনের সেরা ঠিকানা শহরের বাস আর অটো। ওভারটেকিং থেকে শুরু করে পথের মাঝে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়া, এদের জুড়ি মেলা ভার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক কন্ডাকটর ব্যস্ত রাস্তার মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাত্রী ডেকে চলেছেন, যা ট্রাফিক আইনে জরিমানাযোগ্য অপরাধ। এখানেও প্রশ্ন এসে যায় সেই ‘মাসোহারার’।
চাকা যদি ফাটে?
সরকার থেকে নিয়ম করে বলা আছে বাসের চাকার স্বাস্থ্য যেন ঠিক থাকে। বিশেষ করে পিছনের চাকার। চাকা ফেটে বাস দূর্ঘটনার নজির কলকাতা শহরে রয়েছে। কিন্তু নিয়মের পরোয়া না করেই দিনের পর দিন খারাপ টায়ার দিয়েই কাজ চালিয়ে দিচ্ছে বাসমালিকেরা।
জেব্রাক্রসিং কীসের জন্য?
রাস্তা পারাপারের জন্য শহরে জেব্রাক্রসিং থাকে। জেব্রাক্রসিং-এর ওপর দিয়েই রাস্তা পার করার নিয়ম। ‘শর্টকাট’ জীবনধারায় অভ্যস্ত মানুষ সেইসবের তোয়াক্কা করেন না। চলন্ত গাড়িকে হাত দেখিয়ে পথ পেরোন তারা। এই নাগরিক অজ্ঞানতার কোনও জরিমানা নেই বলেই হয়ত জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার সাহস করতে পারে কিছু মানুষ।
রাস্তাতেই গ্যাসের সিলিন্ডার
ব্যস্ত রাস্তা আটকে রাজনৈতিক সভামঞ্চ থেকে শুরু করে পুজো-প্যান্ডেল, কলকাতা শহরে এই বেনিয়ম গুলোই নিয়ম হয়ে গেছে এখন। রাস্তার ওপর রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের অস্থায়ী গোডাউন বানিয়ে রাখার নজিরও এই শহরেই রয়েছে। ওপরের ছবিটি যশোর রোডের।
অসচতেন মানুষ
‘সিভিক সেন্স’ শব্দবন্ধটির ব্যাপ্তি অনেকটাই। এর আওতায় কী কী পড়ে তার হয়ত কোনও ব্যকরণ বই নেই। মানুষ নিজের শিক্ষা সচেতনতা- দিয়ে সেই অনুভূতি গড়ে তোলে। নাগরিক অসচেতনতার মাশুল গুনতে হয় একটা শহরকে। যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যাগের কারণে বর্ষার সময় আটকে যায় নিকাশি নালা নর্দমা। জমা জলে নরক হয়ে ওঠে তাদেরই প্রিয় শহরের নানান জায়গা।
কীভাবে বিধি মানবে কলকাতাবাসী?
সমাজবিদেরা বলছে, আত্মসচেতনতা জরুরি, আবার অনেকে বলছেন, কড়া শাস্তি না দিলে এই রোগ থেকে মুক্তি নেই। শাস্তি দিয়ে একটা প্রজন্মকে আইনের পথে আনতে পারলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তা মজ্জায় প্রবেশ করবে।