1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ এপ্রিল ২০১৭

দেশ-কাল-সীমানা বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষাভাষীর ওপর যে দূরত্বই আরোপ করুক, সংস্কৃতি গড়ে দিয়েছে চিরন্তন এক সেতু৷ চলচ্চিত্র তারই একটি স্তম্ভ৷ আর কলকাতায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসব আরও একবার সেটা প্রমাণ করল৷

https://p.dw.com/p/2bN6M
Bangladesch Bidhannagar Film Society
ছবি: DW/P. Samanta

বিধাননগর ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবকে ঘিরে কলকাতার মানুষের তুমুল আগ্রহ, পড়শিকে তার ছবির মাধ্যমে জানার আকুতি ফের চোখে পড়ল৷ বর্ষবিদায় ও নববর্ষের সন্ধিক্ষণে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখলেন বাংলাদেশের একগুচ্ছ পূর্ণ ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি৷

বাংলাদেশ যখন ১৪২৪ বঙ্গাব্দের আগমনে মুখর, তখন বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের শুভ সূচনা হয়৷ ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল – এই তিনদিনে মোট আটটি ছবি দেখানো হলো ঐকতান হলে৷

প্রথমদিনের প্রথম ছবি ছিল দুই বাংলার প্রিয় সাহিত্যিকহুমায়ূন আহমেদের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘অনিল বাগচীর একদিন'৷ ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি ক্যানাডার মন্ট্রিয়ালে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়েছে৷ পরিচালনা ও চিত্রনাট্য মোরশেদুল ইসলামের৷ কলকাতার দর্শকরাও এই ছবিটি দেখে মুগ্ধ৷

এর পর দেখানো হয় ২০১৬ সালের ভিন্ন স্বাদের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি – আহসান কবির পরিচালিত ‘প্রত্যাবর্তন' এবং তাসমিয়াহ আফরিন মৌ পরিচালিত ‘কবি স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জবানবন্দি'৷

দ্বিতীয় দিনের তালিকায় ছিল দু'টি পুরস্কৃত ছবি – ‘কিত্তনখোলা' ও ‘জালালের গল্প'৷ ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কিত্তনখোলা' ছবিতে মেলার অল্প সময় নিয়ে কাহিনির বিস্তার, তার মধ্যেই বিশাল বাংলার চিত্র উঠে এসেছে৷ ‘কিত্তনখোলা'-র জন্য আবু সাঈদ পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও সংলাপের জাতীয় পুরস্কার৷ পরিচালক আবু শাহেদ ইমনের চলচ্চিত্র ‘জালালের গল্প' আন্তর্জাতিক স্তরে ঝুলিতে ভরেছে বেশ কিছু পুরস্কার৷

সুজিত পাল, বিধান নগর ফিল্ম সোসাইটি, কলকাতা

১৬ এপ্রিল, উৎসবের শেষদিনে ছিল বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত ও মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘আমার বন্ধু রাশেদ'৷ মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত উপন্যাস থেকে নেওয়া ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবির গল্পে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিশোরদের অংশগ্রহণের বিষয়টি৷

পরবর্তী স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি ছিল খন্দকার সুমন পরিচালিত ‘পৌনঃপুনিক'৷ ছবিটি ইতিমধ্যে বিহারের পাটনায় বোধিসত্ব আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশ্যাল জুরি মেনশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে৷

২০১০ সালের ‘ডুবসাঁতার' নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ও জয়া এহসান অভিনীত৷ ৯২ মিনিটের এই ছবিটিই ছিল উৎসবের শেষ ছবি৷ একজন সমাজকর্মী ও আর একজন মাদকাসক্ত মানুষের জটিল সম্পর্কের বাস্তবের ওপর এই ছবি দাঁড়িয়ে যা প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষকে ছুঁয়ে যাবে৷

বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিগুলি নির্বাচন করেছে ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া৷ বাংলাদেশের সমকালীন চলচ্চিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিধাননগর ফিল্ম সোসাইটি ২০১৪ সাল থেকেই (২০১৬ সাল ছাড়া) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব করে আসছে৷ প্রত্যেক বছরই থাকে একগুচ্ছ মননশীল ছবি৷ মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবির বদলে আন্তর্জাতিক স্তরের ভাবনাঋদ্ধ, উন্নত মানের বাংলাছবি যে সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে যাওয়া উচিত, এমনটা মনে করেই প্রতি বছর বিধাননগর ফিল্ম সোসাইটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে৷

এই সোসাইটির সহ-সম্পাদক সুজিত পাল জানালেন, ‘‘বাংলাদেশের ছবি দেখার বিপুল চাহিদা আছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্র যাই হোক না কেন, ব্যক্তিস্বার্থ বা দেশের স্বার্থ দ্বারা সংস্কৃতির বৃহত্তর আঙ্গিনা প্রভাবিত হয় না৷ বাঙালি মানে তার মাতৃভাষা বাংলা, দেশ যাই হোক৷ এই আবেগের জন্যই বাংলাদেশের ছবি দেখার দর্শক এ বাংলায় চিরকালই বেশি৷ তাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ভিড় উপচে পড়ে, অতিরিক্ত চেয়ারের ব্যবস্থাও করতে হয়৷ আর বাংলাদেশের ছবি মানেই এখন জয়া আহসানেরমতো আন্তর্জাতিক মুখ৷ সে কারণেও জনপ্রিয়তা স্বাভাবিক৷ এ বছরেও উৎসবে দেখানো ছবিগুলি উচ্চ প্রশংসিত এবং সর্বস্তরে সমাদৃত হয়েছে৷''

‘এক সুর এক টান একই অকূলের আকুতি' নিয়ে সংস্কৃতি লেনদেন দুই বাংলার কাছে গর্বের৷ ভালো ছবির লেনদেন সে বুনিয়াদ আরও মজবুত করে৷ সেটা শুধু বাংলাদেশ কেন, যে কোনো দেশের সঙ্গেই হতে পারে৷ এই ভাবনা থেকে দর্শকদের আন্তর্জাতিক স্তরের ভালো ছবি দেখানোর জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে দু'টি করে বিদেশি ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে সোসাইটি৷ মাঝেমধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও সার্বিয়ার ছবির ছোট প্যাকেজও দেখানো হয়৷ এ সব উদ্যোগের নেপথ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে একটাই আশা, রাজনীতি যা পারে না – সেটাই হয়ত একদিন করে উঠবে চলচ্চিত্র৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য