কলম্বিয়ায় বস্তিতে গ্রাফিতি শিল্প
কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতার অন্যতম দরিদ্র এলাকা সিউদাদ বলিভার। শিল্পের ছোঁয়ায় এলাকাটিতে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকাটি পর্যটন-আকর্ষণ হয়ে উঠলে তা স্থানীয় ব্যবসার জন্যও লাভজনক হবে।
দেখার মতো দৃশ্য
সপ্তাহের রোববারগুলোতে সিউদাদ বলিভারের বাসিন্দারা অভিনব দৃশ্য দেখেন। যে কেবল কারে চড়ে অন্য দিনগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজে যান, রোববারে সেগুলোতে চড়ে বসেন পর্যটকেরা। ট্রান্সমিকেবল এই ১৫ মিনিটের যাত্রায় পর্যটকদের পাড়াটিক এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যায়।
গ্রাফিতির রাজধানী
কেবল কারে চড়লে পাহাড়ের গায়ে স্তূপ করে সাজানো অনেক রঙিন পুরাতন ভবন দেখা যায়। দেখে মনে হতে পারে খেলনার ব্লক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব ভবনের বেশিরভাগেরই সামনের অংশ নানা ধরনের ম্যুরাল দিয়ে আচ্ছাদিত। স্ট্রিট আর্টের প্রতি সবচেয়ে ‘সহনশীল’ শহরগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে স্থান করে নিয়েছে বোগোতা।
মনোমুগ্ধকর দৃশ্য
কেবল কার থেকে এল প্যারাইসো বা প্যারাডাইস ভিউপয়েন্ট স্টেশনে নামা যায়। বোগোতার রাজধানীর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। সেখান থেকে হেঁটে নামার সময় দেখা যায় একের পর এক ম্যুরাল এর রঙের বাগান তৈরি করেছে। এসব গ্রাফিতিতে এলাকাটির বাসিন্দাদের গল্প থেকে শুরু করে কলম্বিয়ার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ এবং প্রাণিজগতকে তুলে ধরা হয়েছে।
গল্প বলে ম্যুরাল
"বোগোতা কালার" প্রকল্পের সহ-প্রবর্তক লুইসা সাবোগাল বলেন, "আমরা শিল্প ব্যবহার করে সিউদাদ বলিভারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু নেতিবাচক ধারণা দূর করতে চেয়েছিলাম।" সাবোগাল এবং তার সহকর্মী মে রোহাস ২০১৬ সালে তাদের এই প্রকল্প শুরু করেন। আশেপাশের দেয়াল এবং বাড়ির সামনের অংশে ছবি আঁকার জন্য আন্তর্জাতিক স্ট্রিট আর্ট শিল্পীদের আহ্বান জানান তারা।
গ্রাফিতি কর্মশালা এবং শিল্প আলোচনা
একটা কাজ অন্তত শুরু হয়েছে। এলাকাটিতে এখন প্রতি মাসে অন্তত ৪০০ জন পর্যটক আসেন। খাদ্য ও পানীয় বিক্রি এবং গাইডেড ট্যুর অফার করে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে চলেছে। সিউদাদ বলিভারে প্রায় ছয় লাখ ৬০ হাজারের মতো বাসিন্দা রয়েছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এদের অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো
এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই বোগোতার অন্যান্য অংশে কাজ করেন। ২০১৮ সালে ট্রান্সমিকেবল চালু হওয়ার ফলে সিউদাদ বলিভার একেবারে বদলে গেছে। সংকীর্ণ, প্যাঁচানো এবং কাঁচা রাস্তা দিয়ে স্থানীয় বাসে ৮০ মিনিটের যাত্রাপথ এখন এই কেবল কারের সৌজন্যে পরিণত হয়েছে মাত্র পনের মিনিটের যাত্রায়।
পাখির চোখে
কেবল কারটির রয়েছে ১৬৩টি কেবিন। ঘণ্টায় সাত হাজার যাত্রী পরিবহণে সক্ষম এই কেবল কার। প্রতিদিন এই ঝুলন্ত গাড়িতে যাত্রা করেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ। তবে শুধু বাসিন্দা না, উঁচু পাহাড় থেকে যারা সাত লাখ বাসিন্দার শহরটিকে পাখির চোখে দেখতে চান, তাদের জন্যও এটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সিউদাদ বলিভারে পর্যটনকেন্দ্র
শহরটির পর্যটন সংস্থার পরিচালক আন্দ্রেস সান্তামারিয়া বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হল স্থানীয় ব্যবসা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সিউদাদ বলিভারকে বোগোতার অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থানে পরিণত করা।" এলাকাটির জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে এবং অতিরিক্ত ৪০ জন সরকারী ট্যুরিস্ট গাইডকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতদিন এই পুরো এলাকায় কেবল একজনই গাইড ছিলেন।