কাউন্সিল অফ ইউরোপের ৬০ বছর
৫ মে ২০০৯ইউরোপীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই৷ ইউরোপের অনেক নাগরিকের মনেই এই সব প্রতিষ্ঠান বা তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই৷ এই বিভ্রান্তির যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷ যেমন ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’, ‘ইউরোপীয়ান কাউন্সিল’ বা ‘কাউন্সিল অফ দ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান৷ অথচ এদের নামের মধ্যে এত মিল থাকায় অনেকেই এই সব প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে সনাক্ত করতে পারেন না৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর নিজস্ব পরিচয় নিয়ে আরও এক বিভ্রান্তির কারণ রয়েছে৷ কারণ এই পরিষদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা ও সঙ্গীত – দুটিই ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ নীল পতাকার উপর ১২টি সোনালী নক্ষত্রের অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে৷ ইউরোপের সবচেয়ে পুরানো প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’ ৫ই মে ৬০ বছর পূর্ণ করল৷
প্রেক্ষাপট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর ১৯৪৯ সালের ৫ই মে ইউরোপের ১০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা লন্ডনে মিলিত হয়ে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর জন্ম দেন৷ তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপ মহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা৷ আজ ঐ পরিষদের কাজ হল সদস্য দেশগুলিতে মানবাধিকারের উপর নজর রাখা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর কাঠামো কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে ততটা আবদ্ধ নয়৷
ইতিমধ্যে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭৷ গোটা ইউরোপ মহাদেশ ও রাশিয়া জুড়ে বিস্তীর্ণ এই এলাকা জুড়ে এই পরিষদ সক্রিয় রয়েছে – ব্যতিক্রম শুধু বেলারুশ ও ভ্যাটিকান৷ বেলারুশ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এ যোগদানের আবেদন জানিয়েছে বটে, কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর কারণে সেদেশ পূর্ণ মর্যাদা পাচ্ছে না৷ ভ্যাটিকান সিটি পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় সন্তুষ্ট রয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো ও জাপানও পর্যবেক্ষক দেশের মর্যাদা পেয়েছে৷
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব
মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আইনী শাসন কাঠামো গড়ে তোলার কাজে সহায়তা এবং সামাজিক উন্নয়ন – ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর মন্ত্রী পরিষদে ও সংসদীয় অধিবেশনে এই সব বিষয়গুলি প্রাধান্য পেয়ে থাকে৷ ১৯৯৮ সাল থেকে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতও এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে৷ সেখানে সদস্য দেশগুলির বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়ে৷ রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্রগুলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগই এই আদালতে বিবেচিত হয়৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’ ও ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের প্রায় ২,০০০ কর্মী এই সব আবেদন খতিয়ে দেখেন৷ তুরস্ক বা ফ্রান্সে হেজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, জার্মানির পূর্বাঞ্চলে জমির মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি – এমন অনেক বিষয় নিয়ে বিরোধ মেটাতে তৎপরতা দেখায় এই প্রতিষ্ঠান৷ ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর পর্যবেক্ষকরা সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেক অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন৷
‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’ ও ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করা সদস্য দেশগুলির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বটে, কিন্তু বাস্তবে তাদের এই কাজে বাধ্য করা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে৷ যেমন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের গোপন কারাগারে পাচার করার ক্ষেত্রে ইউরোপের কিছু দেশ সহায়তা করেছিল – এই অভিযোগের আলোকে ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ’এর মন্ত্রী পরিষদ ইউরোপের কিছু প্রশাসনের নিন্দা করে৷ কিন্তু বিষয়টি আজও পুরোপুরি স্পষ্ট হয় নি৷
লেখক: ব্যার্ন্ট রিগার্ট, অনুবাদক: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার