কাটালুনিয়ার সংকট থেকে ইউরোপের শিক্ষা নেয়া উচিত
১৭ অক্টোবর ২০১৭বার্সেলোনার পরিস্থিতি এখন এমন, যা অসহায় মানুষের অনুভূতি মনে করিয়ে দেয়৷ ক'দিন আগেই ঐ শহরে পুলিশের সঙ্গে স্বাধীনতাপন্থিদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ স্বাধীনতা বিরোধীরাও সেখানে বিক্ষোভ করেছে৷ কিন্তু তারপর কী? কাটালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কারলেস পুজেমন এখন সময়ক্ষেপণ করছেন৷ মাদ্রিদও কোনো ছাড় দিচ্ছে না৷ উলটো স্বাধীনতাকামী শীর্ষ দুই নেতাকে সোমবার কারাদণ্ড দিয়েছেন স্পেনের এক আদালত৷ তাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে কাটালুনিয়ার নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোরত পুলিশকে বাধা দিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ৷
অক্টোবরের শুরুতেকাটালুনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে৷ বার্সেলোনার আঞ্চলিক সরকার স্বাধীনতাকামীদের অনুভূতি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে৷ কার্লেস পুজেমন ও তাঁর সঙ্গীরা যে স্পেন সরকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিজমের অভিযোগ এনেছে, তা হাস্যকর৷
ইউরোপের অন্য দেশের সরকারগুলোকে ভাবতে হবে কীভাবে কাটালুনিয়ার পরিস্থিতি আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গেল৷ পপুলিস্ট মুভমেন্টকে উপেক্ষা করা ও তাদের দাবি ছুড়ে ফেলে দেয়া কখনও সহায়ক হতে পারে না৷ কারণ এর ফলে তারা মনে করতে শুরু করে যে, যা করার নিজেদেরই করতে হবে৷ স্পেনেও তাই হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের কঠোর মনোভাব কাটালুনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিয়েছে৷ এক্ষেত্রে ব্রিটেন গণতান্ত্রিক উপায়ে ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবি সামাল দিয়েছে৷
ইউরোপের ভূমিকা
কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার সমর্থকরা মনে করেছিলেন, ইউরোপ হয়ত একসময় তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে৷ কিন্তু এটি ছিল শিশুদের মতো ভাবনা৷ স্বাধীনতাকামীরা খুব ভুল হিসেব করেছিলেন৷ কারণ বিভিন্ন দেশের জাতীয় সরকার নিয়ে ইইউ গঠিত৷ ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানানোর কোনো কারণ নেই ইইউর৷ ব্রাসেলসের কোনো প্রতিনিধি সংকটের সমাধান করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আসবে – এমনটা ভাবা অকল্পনীয়৷
তবেকাটালুনিয়ার সংকট থেকে ইইউ নেতাদের শিক্ষা নিতে হবে৷ কারণ পপুলিজম বিষয়টি ভবিষ্যতেও থাকবে৷ অস্ট্রিয়ার নির্বাচনের ফলাফল তার আভাস দিচ্ছে৷ ফলে পপুলিজমের উত্থান সম্পর্কে আগাম খবর পেতে ইউরোপীয় স্তরে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই জাতীয় সরকারগুলোকে নিজেদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে হবে৷ এভাবে একত্রে কাজ করতে না পারলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পপুলিজম, ইসলামোফোবিয়া, ব্রেক্সিট – এ সবের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷ এবং এতে করে ইউরোপের অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে৷
বারবারা ভেসেল/জেডএইচ