কায়রো শহরকে সাইকেলবান্ধব করার উদ্যোগ
৩০ জুন ২০২১কায়রো শহরে সপ্তাহের মাঝের এক দিনে হেবা আতিয়া মুসা নিজের সাইকেলে করে কাজে যোগ দিতে চলেছেন৷ কায়রোয় সাইকেল-আরোহী নিত্যযাত্রী খুবই বিরল দৃশ্য৷ সাইকেলচালক হিসেবে নারীরা আরো বিরল৷
রাজপথে একাধিক বাধা
নগর পরিকল্পনাকারী হিসেবে কায়রো শহরকে আরো সাইকেল-বান্ধব করে তুলতে চান মুসা৷ তার কাছে প্রতিদিন সাইকেলে করে কাজে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা৷ যদিও কখনো সে জন্য সাহসের প্রয়োজন হয়৷ কী কী উন্নতি প্রয়োজন, হাতেনাতে তিনি সেটা টের পান৷ হেবা বলেন, ‘‘আমি সাধারণত পথের ডান দিকে সাইকেল চালাই৷ সেখানেই যত ধুলাবালি, জঞ্জাল-ভরা নর্দমা৷ পথও প্রায় খানাখন্দে ভরা৷ গাড়ির মানুষ সাইকেল-চালক দেখতে অভ্যস্ত নয়৷ ড্রাইভার খুব কাছাকাছি গাড়ি নিয়ে এলে আমি বিপদে পড়তে পারি৷''
পথেঘাটে সব রকমের বাধা ছড়িয়ে রয়েছে৷ কায়রো মেট্রোপলিটন এলাকা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় জনপদ৷ দুই কোটি দশ লাখেরও বেশি মানুষ সেখানে বাস করেন৷
যানবাহন ও পথচারীদের মধ্যে সব সময়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলে৷ মিশরের কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণ ও হাইওয়ে চওড়া করে পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সরকার দেশজুড়ে প্রায় ৭,০০০ কিলোমিটার রাস্তার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে৷
মহামারির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
করোনা মহামারির শুরু থেকে মিশরের রাজধানীতে সাইকেল চালকের সংখ্যা সামান্য বেড়ে গেছে৷ কায়রোর কেন্দ্রস্থলে বাইসাইকেলের দোকানের মালিক মোহামেদ ইয়ুসরি সাইকেলের বাড়তি চাহিদা লক্ষ্য করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গণপরিবহণ ব্যবস্থা ভিড়ে ঠাসা থাকে৷ মহামারির কারণে কিছু মানুষ ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে এমন যানবাহন এড়িয়ে চলছেন৷ বিকল্প হিসেবে অনেকেই সাইকেল বেছে নিচ্ছেন৷ তাছাড়া শহরে যানবাহনের বেড়ে চলা সংখ্যা ও যানজটের কারণে মানুষ বাইসাইকেলের সুবিধা আরও বেশি বুঝতে পারছেন৷''
কিন্তু সাইক্লিং আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে পথঘাটের অবস্থার উন্নতি করতে হবে৷ ‘তবদিল'-এর মতো একাধিক উদ্যোগ ঠিক সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে৷ ২০১৮ সালে মুসা-সহ চার জন নগর পরিকল্পনাকারী এই স্টার্টআপ গড়ে তুলেছিলেন৷ ব্যক্তিগত চাঁদার অর্থে কাজ শুরু হলেও এখন আরব সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ অর্থায়ন করতে এগিয়ে এসেছে৷ ‘তবদিল' সাইকেল চালানো আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়৷ সাইকেল-চালকদের বর্তমান ও সম্ভাব্য সংখ্যা, তাদের যাত্রাপথ, সাইকেল বেছে নেবার কারণের মতো তথ্যও সংগ্রহ করছে এই উদ্যোগ৷
পরিবহণের জট খুলতে সার্বিক উদ্যোগ
কায়রোয় জাতিসংঘের হ্যাবিট্যাট সেন্টারে সাইকেল চালক ও অন্যান্য রাজপথ ব্যবহারকারীদের জন্য শহরের অবকাঠামো উন্নতির পথ খোঁজা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের হ্যাবিট্যাট প্রকল্প অফিসারের সালমা মুসাল্লেম বলেন, ‘‘আমরা শহরের কেন্দ্রস্থলে সাইকেলের পথ ও বাইক শেয়ারিং পরিষেবা চাই৷ তার জন্য রাজপথের ডিজাইন বদলাতে হবে৷ যদি ভ্রমণের ৭০ শতাংশই পায়ে হেঁটে, সাইকেল চেপে অথবা গণপরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘটে, তাহলে রাজপথের ৭০ শতাংশও পরিবহণের সেই সব অংশের জন্য ধার্য করতে হবে৷''
জাতিসংঘের হ্যাবিট্যাটের সূত্র অনুযায়ী কায়রো শহরের প্রায় ৫৫ শতাংশ ভ্রমণই গণপরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘটে৷ সাইকেল চড়া ও হাঁটার অংশ ১৩ শতাংশ৷ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সাইক্লিং গ্রুপ গড়ে উঠছে৷
সাইকেল ভাড়ার সুযোগ
সাইকেল অনুরাগী হিসেবে মোহামেদ সামি ‘গোবাইক' নামের উদ্যোগ গড়ে তুলেছেন৷ ইউরোপে বাস করার সময়ে তিনি সেই আইডিয়া পেয়েছিলেন৷ তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, যে কিছু মানুষ সাইকেলকেই ভ্রমণের মূল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন৷ সামি বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে সাইকেল চালাতে উৎসাহ দিতে চাই, কারণ আমরা রাজপথে গাড়ি, ট্যাক্সি ও বাসের সংখ্যা কমাতে চাই৷ সুপারমার্কেটে যেতে, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটারের মতো কম দূরত্বে ভ্রমণের জন্য সাইকেল ব্যবহার করা অনেক সহজ উপায়৷ সেটা করলে আমাদের সবার অপছন্দের যানজটও কমে যাবে৷''
প্রতি শুক্রবার শহরের বিভিন্ন অংশে ‘গোবাইক' গ্রুপের মিটিং হয়৷ যাদের সাইকেল নেই, তাদের জন্য উদ্বৃত্ত সাইকেলের ব্যবস্থা করা হয়৷ যে কেউ এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারেন৷
নির্দিষ্ট কোনো দিনে সম্ভবত ৩০ জন সাইকেল চালক কায়রোর রাজপথে ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন৷ বেশিরভাগ চালকই নারী হওয়ায় অনেকেই নড়েচড়ে বসছে৷ যে কোনো মানুষই যে সাইকেল চালাতে পারেন, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ হেবা আতিয়া মুসা বলেন, ‘‘আমাদের সঠিক অবকাঠামো ও সাইকেলের জন্য আলাদা পথ থাকলে কত ভালো হতো! গাড়িসহ অন্যান্য বাধা এড়িয়ে চলা যেত৷ তখন প্রতিদিন কত সহজে কাজে যেতে পারতাম! আমি চাই মানুষ সাইকেল চালক দেখে অভ্যস্ত হয়ে যাক৷ সাইকেল যে শুধু পুরুষদের জন্য নয়, সেটাও স্পষ্ট হয়ে উঠুক৷''
সূচনা হয়ে গেছে৷ তবে এখনো দীর্ঘ পথ চলা বাকি৷
এল-তুনি/ম্যুলার/এসবি