কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা
জার্মানি ও উত্তর ইউরোপের বেশ কিছু স্থানে কৃষকরা গত কয়েক মাসে প্রচণ্ড গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া মোকাবেলায় হিমসিম খেয়েছে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, গরমে এমন আবহাওয়া এখন প্রায়ই থাকবে, তাই প্রয়োজন অভিযোজন৷
কমেছে জলীয় উপাদান
বার্লিনের উত্তরে গাড়িতে ৯০ মিনিট গেলে হান্স-হাইনরিশ গ্র্যুনহাগেনের আবাদী জমি৷ তিনি দেখলেন যে, তাঁর ফসল বেড়ে উঠতে এবার বেশি সময় লাগছে৷ কয়েক বছর আগেও যেখানে অক্টোবরের শুরুর দিকেই তিনি আলু তুলতেন, এখন তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে৷ তাঁর মতে, এর কারণ শীতের কুয়াশা পড়তে দেরি হওয়া৷
এক বস্তা আলু
গ্র্যুনহাগেন একটি চারা থেকে এ পরিমাণ আলুর ফলন আশা করেন৷ কিন্তু যেহেতু ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি হলে এরা বিবর্ণ হয়ে পড়ে, তাই ভালো আলুর ফলন কঠিন হয়ে পড়ছে৷ সেজন্য প্রচুর পানি খরচ করতে হচ্ছে৷ তারপরও এই গ্রীষ্মে তিনি অর্ধেক ফলন ঘরে তুলছেন৷
নানা শস্য
এই কৃষক নানা রকমের শস্য উৎপাদন করেন৷ অনেক শস্যেরই দ্রুত অঙ্কুর বের হয় এবং তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে৷ এতে দেরিতে আসা কুয়াশায় এদের ফলন খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ যেখানে সম্ভব, সূর্যের তাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তিনি এখন শস্যের বহুমুখীকরণ করছেন৷
কুয়াশার কামড়
আঙ্গুর চাষিরাও বিপাকে পড়েছেন৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের যেসব জায়গায় ওয়াইন তৈরি হয়, সেখানে উজ্জ্বল দিনের আলোর কারণে অঙ্কুর দ্রুত বের হয়৷ কিন্তু রাতে তাপমাত্রা অনেক কমে গেলে এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে৷ কুয়াশার কামড়ে এদের মৃত্যুও হতে পারে৷
আঙুর ঘরে তোলা
লম্বা গ্রীষ্মকাল মানে আঙুর পাকবেও দ্রুত৷ তার মানে, ফল তুলতেও হবে তাড়াতাড়ি৷ এমনকি বেশি উষ্ণ তাপমাত্রায় এদের স্বাদও বদলে যায়৷ অথচ ওয়াইন তৈরি প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত ঠান্ডা তাপমাত্রা বজায় রাখতে প্রযুক্তির বিশেষ ব্যবহার প্রয়োজন হয়৷ তাই চাষিরা রাতে অথবা খুব ভোরে, তাপমাত্রা বেড়ে যাবার আগে আঙুর তুলে ফেলতে চেষ্টা করেন৷
মৃত্তিকার যত্ন
ভূমির প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে জার্মান চাষিরা আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁদের কথা হলো, যেই ভূমি দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটায়, তাকে তুষ্ট রাখতে হলে প্রচুর গাছ ও ঝোঁপ লাগাতে হবে, যেন শুষ্ক বাতাস না আসে৷
মাটির পুষ্টি
জার্মানির অরগ্যানিক ফুড ইন্ডাস্ট্রি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফেলিক্স সু ল্যোভেনস্টাইন বলেছেন, মাটিতে হিউমাস ও অন্য উদ্ভিদ অণু কতটা আছে, তার ওপর এর পুষ্টি নির্ভর করে৷ এসব উপাদান যত বেশি থাকবে, তত মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বাড়বে৷ তখন এটি খরা ও অত্যাধিক বৃষ্টি উভয়কেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে৷