কেনিয়ার প্রান্তিক চাষিদের জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট
১৪ মে ২০১৯বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির কাজে সহায়তা
জার্মানির ‘আটমোস্ফেয়ার' নামের এনজিও এবং কেনিয়ায় তার সহযোগী সংস্থা একটি পরিবারকে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত রাজধানী নাইরোবির উপকণ্ঠে কিয়াম্বু কাউন্টিতে ৮০০ বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা হয়েছে৷ প্রকল্পের ম্যানেজার ডেনিস মাখনিক বলেন, ‘‘বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে আমরা গরুর গোবর ব্যবহার করে পরিষ্কার বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে পারি৷ রান্নাঘরে ধোঁয়া না বেরোনোর অর্থ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটছে না৷ ফলে প্রতিটি প্লান্ট বছরে প্রায় চার টন সিওটু বাঁচাতে পারে৷''
প্লান্টের প্রাচীর তৈরি করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে৷ খুব শীঘ্রই তাতে গোবর ভরা হবে৷ চাষির পরিবার তখন বায়োগ্যাস কাজে লাগিয়ে রান্না করতে পারবে৷ এক গোয়ালা দম্পতির জন্য এটা বড় এক বিনিয়োগ৷ এই পরিবার এখনো পর্যন্ত শুধু জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেছে৷ তাই তারা সহজে রান্নার জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট চেয়েছিল৷ দু'টি গরু বেচে সেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে৷
অর্থায়নের সমস্যা
তবে এমন প্লান্টের অর্থায়ন এখনো সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ সবচেয়ে ছোট প্লান্টের ব্যয়ও কমপক্ষে ৩০০ ইউরো৷ যে সব পরিবার সন্তানের পড়াশোনার খরচ বহন করে, এমন প্লান্ট তাদের সামর্থ্যের বাইরে৷ সাস্টেনেবল এনার্জি স্ট্র্যাটেজিস সংস্থার ডেভিড কারানজা বলেন, ‘‘এই জেলায় বিশাল বাজার রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো এমন প্লান্ট অনেক মানুষের সামর্থ্যের বাইরে৷ আটমোস্ফেয়ার এনজিও থেকে ভরতুকি পাওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে এর জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই৷''
কিয়াম্বু কাউন্টি-তে কয়েক'শ চাষি বসবাস করেন৷ খেতে ভুট্টা ও গবাদি পশুর খাদ্য চাষ হয়৷ বাগানে শাকসবজি চাষ হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাষিরা এর মাধ্যমে নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে পারেন৷ সে কারণেও বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা তাঁদের জন্য বড় বিষয়৷
বহুমুখী সুবিধা
পাইলিস ওয়ামবুই এমন প্লান্ট গড়ে তুলতে পেরেছেন৷ কারণ তাঁর কাছে প্রায় ৬০০ মুরগি রয়েছে৷ তিনি ডিম বেচেই সংসার চালান৷ সঞ্চয়ের অর্থ ও ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তিনি নিজের জমিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন৷ নিজের গরুর গোবর দিয়েই সেটি চালানো হয়৷ সেটা সম্ভব করতে তাঁকে পানিও মেশাতে হয়৷
সেই মিশ্রণ প্লান্টে ঢেলে দিলে প্রক্রিয়ার শেষে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়৷ মাটির নীচ দিয়ে গ্যাস সরাসরি রান্নাঘরে পৌঁছে যায়৷ পাইলিস বলেন, ‘‘প্রতিবেশীদের কাছে এমন প্লান্ট দেখে আমিও প্লান্ট তৈরি করিয়েছি৷ রান্নার কাজ অনেক সহজ হয়ে পড়েছে৷ আগে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও কাঠকয়লা কিনতে হতো৷ কাঠের দাম ছিল খুব বেশি৷ এখন আর আমার কোনো সমস্যা নেই৷ দেরিতে বাসায় ফিরলেও ১০ মিনিটে রান্না সেরে ফেলতে পারি৷
প্লান্টে অবশিষ্ট কাদা সার হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব৷ ফলে আরও সহজে সবজি বিক্রি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ রাজধানী নাইরোবিতে এর জন্য ভালো দাম পাওয়া যাবে৷ কিন্তু বাস্তবে কি সেটা সম্ভব? ডেনিস মাখনিক বলেন, ‘‘পণ্য সংগ্রহ করার একটি ব্যবস্থা এখনই চালু আছে৷ তবে আমাদের বায়োগ্যাস প্লান্টের কাদা কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত পণ্যের জন্য কোনো লেবেল নেই৷ মানে অরগ্যানিক সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা নেই৷ কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি, এই বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে বড় সুবিধা পাওয়া উচিত৷''
জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব
কিন্তু এখনো প্রক্রিয়া এত উন্নতি হয়নি৷ তাছাড়া চলতি বছরে চাষের কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ প্রায় ৪ সপ্তাহ আগেই বৃষ্টি আসার কথা ছিল৷ এই অঞ্চলের জন্য এমনটা মোটেই স্বাভাবিক নয়৷ কুয়া শুকিয়ে যাওয়ায় কিছু মানুষ পানি কিনতে বেরিয়ে পড়েছেন৷
শুধু ২০০০ সাল থেকেই কেনিয়ায় প্রায় ১০ শতাংশ অরণ্য লোপ পেয়েছে৷ ঘনঘন খরা এমন সমস্যার অন্যতম কারণ৷ কাঠ কাটা বেআইনি হলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ পাইলিস ওয়ামবুই ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পানির অভাবে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে, বাড়তি পানি কিনতে হচ্ছে যার দাম খুব বেশি৷ সবজি চাষ ও প্রাণীদের নিয়েও সমস্যা হচ্ছে৷''
তা সত্ত্বেও বায়োগ্যাস থাকায় জ্বালানি কাঠ কেনার প্রয়োজন হচ্ছে না৷ বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে তিনি তাদের জন্য দ্রুত রান্না করতে পারেন৷ চার সন্তানের মাকে ঋণ পরিশোধ করতে আরও এক বছর সময় লাগবে৷ তা সত্ত্বেও তিনি বায়োগ্যাস প্লান্টটিকে সাম্প্রতিক কালে সংসারের সেরা প্রাপ্তি হিসেবে গণ্য করেন৷
ইউলিয়া হাইনরিশমান/এসবি