কোন পথে ঢাকায় জুয়ার মেশিন, জানে না কেউ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯কোনো পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই তা খালাস করা যায়৷ তবে ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রভাব খাটিয়ে জুয়া খেলার সামগ্রী দেশে ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷
বুধবার ঢাকার চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল৷
ওইসব ক্যাসিনো সিলগালা করার পাশাপাশি সেখান থেকে ১৮২ জনকে আটক করে প্রত্যেককে ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত৷ জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নগদ টাকা, জাল টাকা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ইয়াবাসহ দেশি-বিদেশি মদ৷
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, "এগুলো একটাও স্বীকৃত ক্যাসিনো না৷ আর বাংলাদেশের আইনে কোনো ক্যাসিনোকে লাইসেন্স দেয়ার বিধান নেই৷ মূলত ক্রীড়া সংগঠনের আড়ালে এসব জুয়া খেলা আর মাদক সেবন চলছে, ক্যাসিনো সম্পূর্ণ অবৈধ৷ আমরা যাদের মাদক সেবন করা অবস্থায় পেয়েছি তাদেরকে আইনানুযায়ী জেল দেয়া হয়েছে৷''
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘ দিন আগেই ঢাকায় ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে৷ প্রধানমন্ত্রী এখন এনিয়ে কথা বলায় সবাই তৎপর হয়েছে৷ ক্যাসিনোগুলোতে জুয়া খেলার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে তা অবৈধ পন্থায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং এরসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারাও জড়িত৷''
তবে কোন পথে, কীভাবে জুয়া খেলার এসব সরঞ্জাম ঢাকায় আনা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা৷
জুয়ার মেশিন কীভাবে বাংলাদেশে ঢুকল, এই প্রশ্নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন,‘‘সেটা তো আমি জানি না, কীভাবে ঢুকেছে সেটা আমার জানা নেই৷''
বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো হয়ত কোনো পার্সটার্স, ইয়েটিয়ে এ রকম করে ভেঙেটেনে এনেছে, মিস ডিক্লারেশন থাকতে পারে, আমি ঠিক জানি না, পুরোটাই জানি না৷ এখন এগুলো অনুসন্ধান করতে হবে৷ কীভাবে বাংলাদেশে এসেছে তা খতিয়ে দেখব, (ক্যাসিনো) যেখানে যেখানে আছে আমরা এগুলো অনুসন্ধান করব, দেখব যে কীভাবে কোথা থেকে আসল৷ এগুলো দেশে প্রডিউজ করতে পারে কি না৷ এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা খুব কম...৷''
বাংলাদেশে ক্যাসিনো রয়েছে এটা আগে জানতেন কি না, সেই প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘না না না,একেবারেই নতুন জিনিস৷''
ক্যাসিনোগুলোতে জুয়ার আসরের পাশাপাশি রমরমা মাদকের ব্যবসা চলে৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, সেই প্রশ্ন ছিল এই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জয় কুমার চৌধুরীর কাছে৷
ডয়চে ভেলেক তিনি বলেন, ‘‘আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ে কাজ করি৷ বার, রেস্টুরেন্টগুলো মাদকদ্রব্য বা মদ লাইসেন্সধারীদের কাছে বিক্রি করার জন্য আমাদের কাছ থেকে অনুমতি ও লাইসেন্স নেয়৷ এরপর তারা হয়ত বিদেশ থেকে আমদানি করে বা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের কাছ থেকে কিনে নেয়, সেটা বিক্রি করে৷
ক্যাসিনোতে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে, এমনটা জানানোর পর তিনি বলেন, ‘‘কোনো ক্যাসিনোতে মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়া নেই, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ৷ বিক্রি হচ্ছে, আজকে পত্রিকায় দেখলাম৷ অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক রাখার দায়ে কেইস ফাইল করব, দে উয়িল বি পানিশড৷''
ঢাকার অন্য ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান চালানো হবে কি না, সেই প্রশ্নে সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘‘এটা তো রুটিন কাজ, এখন শুরু হলো, এটার শেষ নেই৷ অবৈধ মাদক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে৷ ক্যাসিনো বা অন্য যে কেনো জায়গায়ই হোক৷... ক্যাসিনো নিয়ে কথা হচ্ছে, আমিতো আগে জানতামই না বাংলাদেশে ক্যাসিনো আছে এবং অপরাধ করে বেড়াচ্ছে৷ আমরা বিশেষ নজর দেব৷ যেখানে অবৈধ মাদক থাকবে সেখানেই অভিযান অব্যাহত থাকবে৷''
ক্যাসিনোগুলো এতদিন চলে আসার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন৷
চারটি ক্যাসিনোতে অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, "গোয়েন্দারাই এই তথ্য দিয়েছে৷ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই অপারেশন হয়েছে৷ আমরা শুনছিলাম অনেকদিন ধরে ঢাকাতে কতগুলো অবৈধ ক্যাসিনো … আমরা কোনো ক্যাসিনোর অনুমতি দিইনি৷ আমরা বিভিন্ন ক্লাব ও হোটেলগুলোতে বারের অনুমতি দিয়েছি, কিন্তু ক্যাসিনোর অনুমতি দিইনি৷
"তবে আমরা শুনছিলাম, অনেক জায়গায় নাকি ক্যাসিনো চালাচ্ছে। আমাদের কাছে সেই তথ্যগুলো ছিল, সেই অনুযায়ী কাল রাতে সেই ক্যাসিনোগুলো চেক করা হয়েছে। সেই ইনফরমেশনের ভিত্তিতেই হয়েছে৷''