কোরিয়া যুদ্ধ শেষ করার মুনের স্বপ্ন কি সফল হবে?
১৫ ডিসেম্বর ২০২১সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও উত্তর কোরিয়া ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ ১৯৫৩ সাল থেকে যুদ্ধবিরতি চলছে৷ মুন বলেন, যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে পরিণত করতে তার সরকার আগামী কয়েকমাস কঠোর পরিশ্রম করবে৷ সেটা সম্ভব হলে দুই বছর ধরে স্থগিত থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা ইতিবাচক গতি পাবে বলে মনে করেন তিনি৷
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে দেয়া বক্তৃতায়ও প্রেসিডেন্ট মুন কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তিতে কাজ করতে সব পক্ষকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
মুনের স্বপ্ন কতটা বাস্তব?
দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক জুংআং-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে মুনের পরিকল্পনাকে ‘পুরোপুরি বাস্তবতা বিবর্জিত' বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ এতে বলা হয়, পরমাণু অস্ত্র থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে উত্তর কোরিয়া কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷
২০০৩ থেকে ২০০৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রো মুন-হিউনের প্রশাসনে চিফ অফ স্টাফ ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন৷ সেই সময় তিনি যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টারা সেই সময় প্রেসিডেন্ট রোকে বুঝিয়েছিলেন, পিয়ংইয়ং তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার আগে যুদ্ধ শেষ করা হলে, সেটা ভুল হবে৷ ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য জানিয়েছেন সেন্টার ফর এ নিউ অ্যামেরিকান সিকিউরিটির সিনিয়র ফেলো ডুয়েঅন কিম৷ তিনি বলেন, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা চেষ্টার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুন তার আগের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ‘আগামী মে মাসে ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইতিহাস বইয়ে স্থান পেতে একটা লিগ্যাসি তৈরি করতে চান'৷
কিম বলেন, ‘‘আমি মনে করি না, পরমাণু অস্ত্রে সমৃদ্ধ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা ঐ অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে৷'' এমনটা হলে উত্তর কোরিয়া কোরীয় উপত্যকা থেকে মার্কিন সৈন্য সরানোর দাবি জানাতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কোরীয় উপত্যকা থেকে বিদেশি সৈন্য সরিয়ে নিলে ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার হামলার মুখে দক্ষিণ কোরিয়া দুর্বল হয়ে পড়বে৷ এছাড়া সৈন্য না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে জাপান, তাইওয়ানসহ অন্য অংশীদারদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না৷
ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌল ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পিংক্সটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট মুন ‘নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি ভুলে গেছেন'৷ তিনি বলেন, ‘‘মুন তার রাজনৈতিক লিগ্যাসির জন্য কিছু অর্জন করতে চাইছেন৷''
মুনের পরিকল্পনাকে খুব বিপজ্জনক আখ্যায়িত করে পিংক্সটন বলেন, এটা কোরীয় উপত্যকায় নিরাপত্তার উন্নতি করতে কোনো অবদান রাখবে না৷
এছাড়া তার পরিকল্পনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে বলে যে তথ্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুন, সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন পিংক্সটন৷ তিনি বলেন, স্বপ্ন পূরণ করতে মুনের হাতে আছে আর কয়েকমাস৷ কিন্তু এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়, ইউক্রেন, ন্যাটোসহ নানান বিষয়ে ব্যস্ত আছে বাইডেন প্রশাসন৷ ‘‘সে কারণে মুনের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমার মনে হয় না,'' বলেন পিংক্সটন৷
জুলিয়ান রায়াল, টোকিও/জেডএইচ