ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর উপায় কী?
২২ নভেম্বর ২০১৯কিকারের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে জার্মানিতে এসে, খেলেছি কালেভদ্রে৷ তারপরও সাহস করে ইউক্রেনের এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে টিম গড়লাম, নাম ‘কিয়েভ-ঢাকা'৷ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনের কাছে দু'টো কিকার টেবিল রাখা হয়েছিল৷ সে দু'টোতে সহকর্মীদের সহায়তায় এবং উৎসাহে অনুশীলনও করলাম বিস্তর৷
যাহোক, খেলার দিনে ফিরে আসি৷ প্রথম ম্যাচে খুবই দুর্বল এক প্রতিপক্ষ সামনে পড়লো৷ খেলায় ছয় গোল করলেই জয় নিশ্চিত৷ দ্রুতই শেষ করলাম সেই খেলা৷ ৬:১ গোলে যাকে বলে হেসেখেলে জয়৷
দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য একই ব্যবধানে হেরেছি৷ দুই জার্মানের সামনে দাঁড়াতেই পারিনি৷ মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে যাই সেই ম্যাচের পর৷ তৃতীয় ম্যাচ জিততেই হবে৷ প্রতিপক্ষ আরব আর চীনের দুই সহকর্মীর গড়া দল৷ খেলা শুরু হতেই পরপর চার গোল করলাম৷ নিশ্চিত জয় দেখে আনন্দ আর চেপে রাখতে পারলাম না৷ কিন্তু, তারপরই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করলো৷ পরপর দু'টি আত্মঘাতী গোল হলো৷ প্রতিপক্ষও করে ফেলেছে আরো দুই গোল৷ অর্থাৎ ম্যাচ তখন ৪:৪ গোলে গিয়ে ঠেকেছে৷ বাকি দুই গোল যে দল করবে তারাই জয়ী৷
এরকম অবস্থায় টের পেলাম ডানহাত কাঁপছে৷ অনুশীলনে যে শট রপ্ত করেছিলাম, সেগুলো ঠিক কাজ করছে না৷ অর্থাৎ, মানসিকভাবে ব্যাপক দুর্বল হয়ে গেছি৷ অথচ যে প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলছি তাদেরকে হারানো খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়৷ শুধুমাত্র মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারলেই ম্যাচটা বের করে নেয়া সম্ভব৷ শেষমেষ অবশ্য কাঁপা হাতেই গোল দু'টি করতে পেরেছিলাম৷
আমি পেশাদার কিকার খেলোয়াড় নই, তারপরও খেলার সময় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পরিণতি কী হতে পারে সেটা টের পেয়েছি৷ যারা পেশাদার খেলোয়াড়, তাদের অবশ্যই এই চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল আয়ত্তে আনা উচিত৷
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়৷ দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই নিজ নিজ জায়গায় আন্তর্জাতিক মানে৷ কিন্তু দু-একজন ছাড়া বাকি সবাইকে আমার মানসিকভাবে বেশ দুর্বল মনে হয়েছে৷ বিশেষ করে যে সময়টায় খেলায় চাপ তৈরি হয়, তখন দেখা যায় একের পর এক সবাই ভেঙে পড়ছেন৷ ফলে অনেক সময় সহজে জেতার সম্ভাবনা তৈরি করেও হেরে যায় টাইগাররা৷ একজন দর্শক হিসেবে আমি মনে করি, ভারতের বিরুদ্ধে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটি তারা হেরেছে শুধুমাত্র মানসিক দৃঢ়তার অভাবে৷
আর ইন্দোর টেস্টে কী দশা হয়েছে সেটাতো সবাই জানেন৷ আমি শুধু দলের অধিনায়ক মুমিনুল হকের একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখ করতে চাই৷ খেলা শেষে তিনি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুধু টেকনিক আর ট্যাকটিকস দিয়ে হয় না৷ প্রস্তুতির আশি শতাংশই মানসিক৷ যারা মানসিকভাবে বেশি দৃঢ় হতে পারবে, তারা ভালো করবে৷ যাদের বিপক্ষে খেলছি তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি দৃঢ়৷''
ক্রিকেটারদের এই মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ এজন্য প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি মনস্তাত্ত্বিকদের নিয়ে একটি টিম গড়া যেতে পারে, যাদের খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ জার্মানিতে এই কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সহায়তা নিতে পারেন৷ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কোচিংয়ের মতো এটাও গুরুত্বপূর্ণ৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷