খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের কয়েকটি জাত
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে৷ তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো বেশ কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
মধ্যম খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ততা সহনীয় ধান
ব্রি ৫৫ হচ্ছে আউশ ও বোরো মৌসুমের ধান৷ এটি মাঝারি খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ত পরিবেশ সহ্য করতে পারে৷ আউশ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫ টন ফলন হলেও বোরো মৌসুমে এই জাত ফলন দেয় প্রতি হেক্টরে সাত টন৷ ব্রি ৫৫ ধান ১০-১২ দিন সেচহীন অবস্থায় এবং ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮ ডিএস/মিটার (প্রতি মিটারে ৮ ডেসিসিমেন্স) লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে৷ ১৪৫ দিনের মধ্যে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
অধিক খরা সহিষ্ণু জাত
ব্রি ৫৭ জাতের এই ধানটিও আমন মৌসুমের৷ এটিও খরা সহনীয় ধান৷ পানির স্তর ২০ সেমি নীচে নেমে গেলেও এ জাতটি টিকে থাকতে পারে৷ এর ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে চার টন৷ ১০৫ দিনে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
খরা সহনীয় জাত
খরা সহনীয় আগাম আমন মৌসুমের ধান হলো ব্রি ৫৬৷ ১৫ থেকে ১৬ দিন সেচহীন অবস্থায় টিকে থাকতে পারে৷ ব্রি ৫৬ প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন ফলন দেয়৷ বীজতলা থেকে শুরু করে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযোগী হয়৷
খরাপ্রবণ এলাকার ধান
ব্রি ৪৩ বোনা আউশের আগাম জাত ও কিছুটা খরাসহিষ্ণু৷ ছিটিয়ে, সারি করে এবং ডিবলিং- এই তিন পদ্ধতিতেই এর বীজ বোনা যায়৷ জাতটির জীবনকাল মাত্র ১০০ দিন৷ উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এই ধান হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন টন ফলন দিয়ে থাকে৷
অতি খরা সহনশীল
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি ৭১ ধানের জাত৷ খরা সহনশীল জাতটি প্রজনন পর্যায়ে ২১ থেকে ২৮ দিন বৃষ্টি না হলেও টিকে থাকতে পারে৷ দেখতে মাঝারি মোটা আকৃতির৷ জীবনকাল ১১৪ থেকে ১১৭ দিন৷ অতি খরা বা মাটির আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে থাকলেও প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টন, মধ্যম মানের খরায় চার টন ও খরা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত ফলন হয়৷
ঝড়, বৃষ্টি সহিষ্ণু ধান
ব্রি ২৯ জাতের ধান চাষে সেচ, সার ও সময় কম লাগে৷ ঝড়, বৃষ্টিতেও হেলে পড়ে না৷ ১৬০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায়৷ বিঘা প্রতি ফলন ২৪-২৮ মন৷
বন্যা সহিষ্ণু ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি প্রায়ই আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়৷ এ ধরনের বন্যা সহ্য করতে পারে এমন কিছু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এর মধ্যে একটি ব্রি ৫১৷ এটি টানা ১৫ থেকে ১৭ দিন পানির নীচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না৷ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ হেক্টরে ৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়৷ দক্ষিণাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ধানের জাত এটি৷
অধিক বন্যা সহনশীল
ব্রি ৭৯ জাতের ধানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ১৮ থেকে ২১ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও ফলনের তেমন ক্ষতি হয় না৷ আর এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে না পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম৷
লবণ সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল
আমন জাতের ব্রি-৭৩ ধান লবণসহিষ্ণু ও অধিক ফলনশীল৷ চাল মাঝারি চিকন ও সাদা৷ ভাতও হয় অন্য চালের চেয়ে ঝরঝরে৷ প্রতি হেক্টরে স্বাভাবিক ফলন হয় সাড়ে চা টন৷ কম লবণাক্ত জমিতে এ ধান ৬ দশমিক ১ টন ফলন দিতে পারে৷ এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও অনেক কম৷
একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু
ব্রি ৭৮ জাতের আমন ধানটি একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু৷ বাংলাদেশে এই জাতের ধান এটিই প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে৷ এর আগে আলাদাভাবে লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছিল৷ সে রকম দুই জাতের ধানের জিন একীভূত করে ব্রি-৭৮ উদ্ভাবন করা হয়েছে৷
জোয়ার-ভাটায় চাষের উপযোগী
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষের উপযোগী জাত ব্রি ৭৬৷ এ জাতের ধানগাছের উচ্চতা ১৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়৷ এ জাতের ধান অন্য যে-কোনো আমনের চেয়ে হেক্টরপ্রতি এক টন বেশি ফলন দেয়৷
উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত ধান
১৯৯৭ সালে ইরান থেকে নিয়ে আসা ‘আমল ৩’-এর সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় মেগাজাত ব্রি ২৮-এর সংকরায়ণ ঘটিয়ে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা নতুন জাতের একটি ধানের উদ্ভাবন করেছেন৷ এর নাম ব্রি ৮১৷ বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন জাতের ধানের ফলন হবে প্রচুর, মানের দিক থেকে হবে রপ্তানিযোগ্য৷ এছাড়া এতে আমিষও থাকবে বেশি৷
উচ্চ ফলনশীল সরু চালের ধান
জাতের নাম ব্রি ৬৩৷ এই জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে উচ্চমানের চাল পাওয়া যায়৷ এর চাল সরু ও গুণাগুণ বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত৷ এ ধানের চাল বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন৷ ১৪৮ থেকে ১৫০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায় এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে সাড়ে ছয় থেকে সাত টন ফলন হয়৷ ব্রি ৬৩-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত ধানের জাতের চেয়ে অনেক কম৷