খাবারের অপচয় রোধ
১৬ ডিসেম্বর ২০১২ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোতে বছরে প্রায় ৮৯ মিলিয়ন টন খাবার অপচয় হয়৷ বাড়ি-ঘরে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই এসব খাবারের অপচয় বেশি হয়ে থাকে৷ এগুলোর মধ্যে কিছু খাবারের নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে আবার কিছু রান্না করা খাবার অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায় কিংবা খাবার সংরক্ষণে সঠিক পন্থা বেছে না নেওয়ায় মূলত অধিক খাবার ফেলে দিতে হয়৷
ডেনমার্ক ভিত্তিক ‘খাবার অপচয় বন্ধ করো' আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সেলিনা জুল বলেন, ‘‘খাবার অপচয় শুরু হয় সেই মাঠ থেকেই৷ চাষী যখন খেতে দেখেন যে, শশাটা একটু বেঁকে আছে, কিংবা গাজরটা আকারে খুব ছোট হয়েছে বা রঙ পাকা হয়নি, তখন সেখান থেকেই সেগুলোকে ফেলে দেওয়া হয়৷ এছাড়া খাদ্য সামগ্রী ছোট ছোট ঠোঙ্গায় বা থলেতে পুরে দেওয়ার সময় নষ্ট হয় আরো ২০ শতাংশ৷'' এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জুল আরো বলেন, ‘‘আমাদের নষ্ট খাবারগুলো আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়াটা যদিও সম্ভব নয়, তবুও একটি বিষয় আমাদের বুঝতে হবে যে, আমরা যতো বেশি খাবার নষ্ট করছি, বিশ্বে খাবারের দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা ততোটাই প্রভাবক হিসেবে কাজ করছি৷''
তাই যে কোন কারণেই খাবার নষ্ট হোক না কেন খাবারের এতোটা অপচয় রোধে সোচ্চার হয়েছে ইইউ৷ ২০২৫ সালের মধ্যে খাবার অপচয় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ সংক্ষেপে ‘ফিউশন্স' নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও, ইউরোপের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, বাণিজ্যিক সংগঠন এবং ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানির হোহেনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়৷
প্রকল্পটির সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নেদারল্যান্ডস এর ভাগেনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়েন টিমারমানস৷ তিনি জানান, ‘‘খাবার সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহের দীর্ঘ চক্রের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যায়৷'' তাই ইইউ'র এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভোক্তাদের এ বিষয়ে আরো সচেতন করে তোলা হবে এবং রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে এসব বিষয়ে আরো নির্ভরযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হবে৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে টিমারমানস বলেন, ‘‘খাদ্য অপচয় রোধে উত্তম পন্থা সম্পর্কে আমরা ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবো এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে গবেষণা পরিচালনা করবো, কারণ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সরবরাহের সাথে অনেকগুলো চক্র এবং ধাপ জড়িত রয়েছে৷''
টিমারমানস মনে করেন, রাজনীতিবিদদের এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের উপর এবং খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যেন তারা খাদ্য অপচয় রোধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ আসন্ন বড়দিনের উৎসবের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এসময় নানা উৎসবে অনেক বেশি খাবার অপচয় হয়ে থাকে৷ তাই বাড়িতে যারা খাবার রান্না করছেন তাদের উচিত হবে ১০ জন কিংবা ২০ জনের জন্য ঠিক কী পরিমাণ খাবার রান্না করা উচিত তা নিজে আগে পরখ করে নিয়ে সে অনুসারে রান্না করা৷ এছাড়া অতিরিক্ত খাবার অতিথিদের বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমেও খাদ্য অপচয় রোধ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন সেলিনা জুল৷
এছাড়া খাদ্য সামগ্রী অপচয় রোধে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেমা ১০০০ এর একটি নতুন উদ্যোগের কথা জানালেন ড্যানিশ সমাজকর্মী সেলিনা জুল৷ তিনি জানান, ‘‘যেসব খাদ্য সামগ্রী অল্পদিন পরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে, সেগুলোকে পাশের টেবিলে আলাদাভাবে সাজিয়ে সেগুলোর মূল্য ৭০ শতাংশ কম ধরা হয়৷'' এর ফলে একদিকে যেমন ক্রেতারা অল্প দামে সেসব খাবার পাচ্ছে, অন্যদিকে, রেমা'র জন্যও কিছু অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব হচ্ছে৷