খালেদার স্বাস্থ্যের অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন'
২৭ অক্টোবর ২০১৯খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বলে আসছেন স্বজন আর দলীয় নেতা কর্মীরা৷ এ ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত দিবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে৷ তবে এই বিষয়ে খালেদা জিয়ার নিজের কী ইচ্ছা তা এখনও স্পষ্ট বলতে পারছেন না কেউ৷ আইনজীবীরা তাঁর অবস্থান জানতে দেখা করার আবেদন জানিয়েও অনুমতি পাচ্ছেন না৷ তাঁরা বলছেন, জামিন পাওয়ার পরই খালেদা জিয়া তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়৷ তিনি ১ এপ্রিল থেকে আটক অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন৷
ঢাকায় রোববার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান যে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে চান কীনা৷ এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন৷ তাঁর জীবনের হুমকি দেখা দিয়েছে৷ সুস্থ অবস্থায় ফিরে না আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ তিনি সুস্থ অবস্থায় পায়ে হেঁটে কারাগারে গিয়েছেন৷ এখন তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, নিজ হাতে খাবার খেতে পারেন না, হাঁটতে পারেন না৷'' বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘‘তিনি যে হাসপাতালে রয়েছেন সেখানে তাঁর সঠিক চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর জামিন আটকে রেখেছে৷ খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে৷''
গত ১ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাথে বিএসএমএমইউতে দেখা করেন বিএনপির তিনজন সংসদ সদস্য৷ তাঁরা হলেন : হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম এবং অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার৷ হারুনুর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে তখন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ তিনি আজ জামিন পেলে কালই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন৷ হারুনুর রশীদ একটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাগারে৷ সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম রোববার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা যখন দেখা করি তখন খুবই অসুস্থ দেখেছি৷ তিনি নিজে চলাফেরা করতে পারেন না৷ খাওয়া দাওয়া করতে পারেন না৷ নিজে কিছুই করতে পারেন না৷ সবই অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়৷'' ঠিকমত চিকিৎসা হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ঠিকমত চিকিৎসা হলে তিনি এত অসুস্থ হবেন কেন?''
তিনি আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে জামিন পেলে বিদেশে যেতে চান কীনা সেটা নিয়ে আমার সাথে কোনো কথা হয়নি৷''
আরেকজন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘‘তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বলেছেন৷ প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার কথা বলেছেন৷ কিন্তু ওনার ইচ্ছার কি কোনো দাম আছে?''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা খালেদা জিয়ার ইচ্ছার কথা দলের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছি৷'' এদিকে শুক্রবার বিকেলে খালেদা জিয়ার সাথে বিএসএমএমইউতে দেখা করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ দেখা করার পর তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ইচ্ছার কথা জানান৷ খালেদা জিয়া যেতে চান কীনা প্রশ্ন করা হলে সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া বলেন নাই৷ আমরাই তাঁকে বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছি৷ কারণ এখানে (বিএসএমএমইউ) যে চিকিৎসা দিচ্ছে এতে কিছুই হচ্ছে না৷ বরং দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা দুই সপ্তাহ ধরে আসছে না৷ এরা আসেই না, কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে না৷ তাহলে অযথা এখানে ফেলে রাখছে কেনো? তাই উন্নত চিকিসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চাই৷''
এই প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রেববার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া দেশে বিদেশে কোথায় চিকিৎসা নেবেন সেটা তিনি জামিন পাওয়ার পর স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন৷ বন্দি অবস্থায় তিনি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না৷ তিনি চাচ্ছেন আগে তাঁকে জামিন দেয়া হোক৷ তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন উন্নত চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবেন৷ কিন্তু তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ৷ এর আগে তিনি দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন তাঁর জামিনই মুখ্য৷ আইন ও সংবিধান অনুযায়ী জামিন পাওয়া তাঁর হক৷ তাঁকে আটকে রাখা হচ্ছে৷ আমরা আইনজীবীরা তাঁর সাথে বারবার দেখা করার আবেদন করেছি৷ কিন্তু অনেক দিন ধরে আমাদের দেখা করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তিনি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ছাড়া আর সব মামলায় জামিনে আছেন৷ ওই দুই মামলায় জামিন পেতে তাঁর কোনো আইনগত বাধা নেই৷ তারপরও তাঁকে জামিন দেয়া হচ্ছে না৷''