খালেদা কি নির্বাচন করতে পারবেন?
১৩ নভেম্বর ২০১৮খালেদা জিয়ার জন্য যে তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র কেনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১৷ ফেনী খালেদা জিয়ার নিজের বাড়ি৷ আর বগুড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের বাড়ি৷
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে কারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, তা বলা আছে৷ সেখানে নানা ধরণের অযোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷
ঐ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারার ‘ঘ' উপধারায় বলা আছে, ‘‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি... তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে৷''
জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে প্রথমে ৫ বছর এবং পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় বিশেষ আদালত তাঁকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন৷ খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন৷
সংবিধানে কোথাও স্পষ্ট করে বলা নেই যে, মামলায় শাস্তির রায় কোন পর্যায় থেকে বিবেচনা করা হবে৷ বিচারিক আদালত না সর্বশেষ আপিল আদালতের চূড়ান্ত রায়?
খালেদা জিয়ার দুটি মামলাই সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ, তারপর আপিল বিভাগ এবং তারপর ঐ বিভাগেই রিভিউয়ের সুযোগ আছে৷ মামলা দুটি এখন আপিল পর্যায়ে আছে৷
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশেও বলা আছে, কোনো ব্যক্তি কোনো আদালতে দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন৷ তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কেউ উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেই ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে আইনে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি৷
গণপ্রতিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বৈধ না অবৈধ, সে বিষযে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারের৷ রিটার্নিং অফিসার কারুর মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে বাতিল করলে তার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আপিল করতে পারবেন৷ কমিশন সেই আবেদন বাতিল করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন৷ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন কমিশন তা অনুসরণ করবে৷
খালেদা জিয়ার দুই মামলায় দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবিধান ও আইনে বলা হয়েছে কারুর সর্বনিম্ন ২ বছর শাস্তি হলে নির্বাচন করতে পারবেন না৷ আর শাস্তি বলতে আমরা বিচারিক আদালতের শাস্তি বুঝি৷ কোনো উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার দণ্ড বাতিল বা স্থগিত করেননি৷ তাই আইন অনুয়ায়ী নির্বাচনের অযোগ্য তিনি৷ এখানে আপিল বা অন্য কোনো বিষয় বিবেচনার কথা নয়৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারবেন কি পারবেন না, এটা আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন রিটার্নিং অফিসার৷''
অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার দু'টি মামলাই আপিল পর্যায়ে রয়েছে৷ আদালতের অনেক রায়ের উদাহরণ আছে যে, আপিল হলে মামলা চূড়ান্ত নিস্পত্তি বলে বিবেচিত হয়না৷ তাই খালেদা জিয়ার মামলার এখনো যেহেতু চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়নি, তাই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ আর সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করছে তিনিনির্বাচন করতে পারবেন না৷''
এদিকে সোমবার নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রিটার্নিংকর্মকর্তার৷ তিনি যেখানে ভোট করতে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন সেই আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে কমিশনে আপিল করতে পারবেন৷ আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিশন বসে ওই আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব৷ রায় বিপক্ষে গেলে তার আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে৷''