‘ইমরানকে অব্যাহতি’
১৩ এপ্রিল ২০১৪
এর প্রতিক্রিয়ায় ইমরান এইচ সরকার বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায়, ধ্বংস করে দিতে চায়৷ আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে৷’’
শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্র’র পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানান গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক পরিচয়দানকারী কয়েকজন৷ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘এখন থেকে ৫ সদস্যের একটি প্যানেল মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবে, যাদের নাম অচিরেই জানানো হবে৷’’
‘গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠক’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কামাল পাশা চৌধুরী৷ তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড-এর সাবেক আহ্বায়ক৷ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল জানান, কামাল পাশা চৌধুরী ২৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সেলে কাজ করছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাস করা কামাল পাশা চৌধুরীর ‘ফেসবুকে’ পেশা হিসেবে লেখা আছে ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট৷
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ১৫-২০ জনের মধ্যে অর্ধেকই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ তাঁরা হলেন, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক শিউলি বিনতে মহসিন, সোহেলী পারভিন মনি, হামিদা বেগম, উপ-কমিটির সদস্য এস এম এনামুল হক আবির, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সম্পাদক রাশিদা হক কনিকা৷ এছাড়াও ছিলেন গৌরব-৭১ এর সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, অপরাজেয় বাংলা’র সভাপতি এইচ রহমান নিলু৷
কামাল পাশা বলেন, ‘‘বিতর্কিত হয়ে পড়ার কারণে ডা. ইমরান এইচ সরকারকে সাময়িকভাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো৷ এই মুহূর্ত থেকে তাঁর কোনো বক্তব্য ও কর্মসূচি গণজাগরণ মঞ্চের বক্তব্য ও কর্মসূচি বলে বিবেচিত হবে না৷’’
কামাল পাশা নিজেকে গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক দাবি করে বলেন, ‘‘শুরু থেকেই আমরা ছিলাম, আমরা শুরুর দিকে বিভিন্ন মিডিয়াতে ইন্টারভিউ দিয়েছি৷ পরবর্তীতে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকায় একজনকে কথা বলতে দিতাম৷ তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব পর্যায়েই থাকতাম৷’’
ইমরানকে কিভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো জানতে চাইলে কামাল পাশা বলেন, ‘‘তিনি যেভাবে মুখপাত্র হয়েছিলেন; সেভাবেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷’’
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরু থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থাকলেও ইমরানবিরোধী এই সংবাদ সম্মেলনে কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ছিলেন না৷ আর গত এক বছরের আন্দোলনে ইমরানের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও এই সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি৷ এ বিষয়ে কামাল পাশা বলেন, ‘‘আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০৫টি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছে৷ আমরা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি; তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবে৷’’
অন্যদিকে ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জেনেছি, যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে করেছেন৷ এর আগেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন যে, গণজাগরণ মঞ্চের কোনো প্রয়োজন নেই৷’’
ইমরান অভিযোগ করে বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার প্রতিবাদ করায় সরকার সমর্থক একটি গোষ্ঠী আমার ওপর ক্ষুব্ধ৷ এসব থেকে খুব সহজেই ধারণা করা যায়, প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায়৷ ধ্বংস করে দিতে চায়৷ আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দল নয়৷ এর মুখপাত্র নির্ধারণ করার দায়িত্বও কোনো একক রাজনৈতিক দলের নেই৷ এভাবে তারা গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে৷’’ যাঁরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের অনেককে চেনেন না জানিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘এদের কখনো দেখেছি বলে আমি মনে করতে পারছি না৷ তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শুনেছি, আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলন হয়েছে৷ এখানে যারা ছিলেন তাঁরা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটি–উপ-কমিটিতে রয়েছেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এ মঞ্চ তৈরি করেছে তাই জনগণই ঠিক করবে গণজাগরণ মঞ্চ কিভাবে চলবে, এর ভবিষ্যত কী হবে৷’’
শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ‘‘আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ আমাদের বন্ধু’’ – এই বক্তব্যের বিষয়টি টেনে এনে ইমরান বলেন, ‘‘হেফাজত যে বক্তব্য দিয়েছে, তা থেকেও বোঝা যায় সরকারের অবস্থান এখন গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে৷’’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ্যাক্টিভিস্টরা রাস্তায় নেমে আসেন৷ সেদিন রাতেই শাহবাগে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ৷ গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রথম থেকেই এর সমন্বয়ক এবং মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন৷ গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগে টানা অবস্থানের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করে নেয়৷ তাদের দাবির মুখে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান করা হয়৷ আর আপিলে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়৷ যা কার্যকর হয়েছে গত ডিসেম্বরে৷ গণজাগরণ মঞ্চের দাবির কারণে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের বিধানও করা হয়৷ আর সেই আইনে এখন জামায়াতেরও বিচার হবে৷