গণটিকা কর্মসূচিতে হোঁচট?
৫ আগস্ট ২০২১অবশ্য ৭ আগস্ট এক দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এই গণটিকা দেয়া হবে। ওই দিন দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে ৩২ লাখ টিকা দেয়া হবে।
এর আগে ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৬ দিনে দেশের এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলো সরকার। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টিকা দেয়ার কথা ছিল। আর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নেয়া যাবে। অনলাইন রেজিষ্ট্রেশন লাগবে না।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মুখে সরকার লকডাউন তেমন সফল করতে না পারায় এই গণটিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১০ আগস্ট লকডাউন শেষ হবে। জানানো হয়েছিলো ১১ আগস্ট থেকে ভ্যাকসিন না দিয়ে বাইরে গেলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্য একদিন পর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।
টিকা কার্যক্রমের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন দেশের শতকরা ৫ দশমিক ৪৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ ২ দশমিক ৫২ জন। সরকারের হাতে এখন টিকা আছে মডার্নার ৪৪ লাখ ডোজ, সিনোফার্মের ৪৭ লাখ এবং অক্সফোর্ডের ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ডোজ। সব মিলিয়ে এক কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার ডোজ। এরমধ্যে অক্সফোর্ডের ১৬ লাখ ৪৩ ডোজ রাখা আছে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে। মডার্না ও সিনোফার্মেরও দ্বিতীয় ডোজ মজুত রাখতে হচ্ছে। আর ছয় দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দিতে হলে দুই কোটি ডোজ টিকার মজুত বা নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
এদিকে ৭ আগস্ট যদি ৩২ লাখ ডোজ দেয়া হয় তারপর অক্সফোর্ডের টিকা বাদ দিলে হাতে থাকবে ৫৯ লাখ ডোজ। সরকার আশা পাইপলাইনে আরো যে ৬৫ লাখ ডোজ টিকা আছে তা এরই মধ্যে এসে গেলে সমস্যা হবে না।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. খুরশীদ আলম সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, কৌশলগত কারণে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে এই পরিবর্তন আনতেই পারেন। এটা নিয়ে এত কথা বলার কিছু নাই । তবে তিনি টিকার স্বল্পতার কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,"আমার হাতে যে টিকা আছে আমি তো সব জায়গায় তা নিতে পারি না। মডার্নার যে টিকা আছে তা যদি গ্রাম পর্যন্ত নিতে পারতাম তাহলে তো ছড়িয়ে দিতে পারতাম।”
আর অধিদপ্তরের পরিচালক(এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,"এসব ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কী হচ্ছে আমি জানি না। ”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা, লেনিন চৌধুরী মনে করেন," ছয় দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার যে উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়নে টিকার প্রাপ্যতা ও সার্বিক পরিকল্পনার অভাব ছিলো। গ্রাম পর্যায়ে টিকা দেয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের তা দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আর টিকা হাতে না নিয়েই চলে আসবে আশা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
নতুন তারিখ অনুযায়ী গণটিকা দেয়া হবে দিনে দুই ধাপে। সকাল ৯টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বয়স্ক ও নারী এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সবার জন্য। ২৫ বছর বয়স হলেই টিকা পাবেন। ১৮ বছরের সিদ্ধান্ত এখন কার্যকর হচ্ছে না।
লেনিন চৌধুরী মনে করেন," এটাকে বাস্তবায়ন করতে হলে আগেই তালিকা করতে হবে। নয়তো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।”
সাধারণ মানুষ যাতে টিকা নিয়ে আশ্বস্ত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন," সরকার বার বার বলেছে এই মাসেই এক কোটি ডোজ টিকা আসবে। তাই যদি হয় তাহলে তো সমস্যা হওয়ার কথা না।”