‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’
২৯ ডিসেম্বর ২০২০২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মেনে নেয়নি বিএনপি৷ নির্বাচনের পরপরই ‘ভোটের আগের রাতে ভোট’ হয়েছে বলে প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচন দাবি করে দলটি৷ তাদের মতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় তাই তারা চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ তারা সংসদে না যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলো৷ কিন্তু একমাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সবাই শপথ নেন এবং সংসদে যোগ দেন৷ এই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পায়৷
নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিএনপি এখনো অনঢ়৷ কিন্তু তারা এরপর উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এখনো অনঢ় আছি৷ তবে নির্বাচন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখনকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি৷ আর বার বার প্রমাণ হচ্ছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷’’
৩০ ডিসেম্বরকে গণতন্ত্র হত্যা এবং কালো দিবস ঘোষণা করে সারাদেশে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ সকাল ১১ টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয়ভাবে আর একই সময়ে দেশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি পালিত হবে৷
আওয়ামী লীগ মনে করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা হরয়েছে৷ এই দিনটিকে তাই তারা ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস হিসেবে পালন করছে৷ সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা আর বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ৷ দেশের জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় সমাবেশ করতে বলা হয়েছে৷
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে৷ সংবিধান সমুন্নত থেকেছে৷ তাই আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করছে৷’’
নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়া নিয়ে বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি সবসময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়৷ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করেছিল৷ তারা হারলেই নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলে৷ ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল৷’’
বিএনপি আশা করে তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে৷ সরকার নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হবে৷ সেটা কবে হবে জানাতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তার আলামত দেখা যাচ্ছে৷ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছেন৷ এর আগে চারটি এনজিও নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলেছে৷
কিন্তু বিএনপি কি সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে এনে চুপসে গেল? বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘প্রশ্নই ওঠে না৷ ঠান্ডা না গরম সময়মত সব দেখতে পাবেন৷ আন্দোলন বলে কয়ে হয় না৷ জনগণ ফুঁসে উঠছে৷’’
আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি একটি দুর্বল দলে পরিণত হয়েছে৷ তাদের ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত ও ‘বিদেশ নির্ভরতার কারণেই’ এই পরিণতি৷ বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘‘নির্বাচনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে হয়ত৷ কিন্তু সংবিধান সমুন্নত রাখায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে ভবিষ্যতে আরো ভালো নির্বাচন হবে৷ এখন নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে৷’’
তার মতে, ওই ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নিরপেক্ষ নন৷ তারা বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন৷’’