1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুলিবিদ্ধ নারীসহ টেকনাফে রোহিঙ্গা নৌকা, মংডুতে সংঘর্ষ বাড়ছে

আরাফাতুল ইসলাম কক্সবাজার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

গত দুদিন ধরেই নাফ নদীর ওপারে গুলিগোলার শব্দ শুনছিলেন টেকনাফের বাসিন্দারা৷ শনিবার গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ভিড়েছে৷ এদিকে, মিয়ানমারের মংডুতে সংঘর্ষ বেড়েছে৷

https://p.dw.com/p/4cXIz
নৌকায় রোহিঙ্গারা
নৌকায় করে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে পৌঁছান রোহিঙ্গারা ছবি: Abdur Rahman/DW

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটিতে পাঁচ রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা ভিড়েছে৷ ছোট্ট নৌকাটি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির একটি টহল দল সেটিকে জেটিতে নিয়ে আসে৷   

রোহিঙ্গাবাহী নৌকাটিকে জেটিতে দেখেছেন টেকনাফের সাংবাদিক আব্দুর রহমান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘নৌকাটিতে গুলিবিদ্ধ একজন রোহিঙ্গা নারী ছিলেন৷ স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে সেটিকে ঘাটে নিয়ে আসা হয়৷ নৌকাটি মিয়ানমার থেকে যাত্রা শুরু করেছিল৷''

নৌকাটি নিয়ে আসার পর বিজিবি জেটি থেকে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন রহমান৷

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই নাফ নদীর অন্যপাশে মিয়ানমারের মংডুতে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন টেকনাফের সাধারণ মানুষ৷ কখনো কখনো গোলার শব্দের পাশাপাশি ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠার কথাও জানিয়েছেন তারা৷

শাহপরীর দ্বীপে ঝালমুড়ি বিক্রি করা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গত পরশু সারাদিন শব্দ শুনেছি৷ আজকে আর গতকালকে থেমে থেমে শব্দ শুনছি৷ গুলির আওয়াজে আমার গাড়িটা কাঁপছে, মানুষ আতঙ্কে আসছে না৷''

মংডুতে চলছে ‘তীব্র সংঘর্ষ'

রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নেই সান লুইন ডয়চে ভেলেকে জানান যে মংডুতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে আটকা পড়েছেন রোহিঙ্গারা৷

তিনি বলেন, ‘‘জান্তা বাহিনী লড়াইয়ে ক্রমশ হারছে৷ আর রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি করছে৷ অন্যদিকে আরাকান আর্মি পুরো অঞ্চল দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে৷''

লুইন জানান, যুদ্ধে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে মংডুতে ধারাবাহিকভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী৷ তা সত্ত্বেও কিছু ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি৷

তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধে পশ্চাদপসারণরত জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গা তরুণদেরকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিয়োগ দিতে চাচ্ছে৷ এটা আরেকটি উদ্বেগের ব্যাপার কারণ এর ফলে দুটি বড় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে৷ রোহিঙ্গারা এই সংঘাতে অংশ নিতে চায় না৷''

প্রসঙ্গত, দশলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও রাখাইন রাজ্যে এখনো ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন৷ তাদের মধ্যে দুই লাখ সত্তর হাজারের মতো রোহিঙ্গা বুথিডাং এবং মংডুতে অবস্থান করছেন৷

তবে রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গারা শীঘ্রই আবারো বড় আকারে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করবেন বলে মনে করছেন না নেই সান লুইন৷ তিনি বলেন, ‘‘মংডু হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবের কারণে যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন শুধুমাত্র তারাই পালিয়ে বাংলাদেশে যেতে চাচ্ছেন৷'' 

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নৌকা করে আসছেন
বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আর কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘোষণার মাঝেই নৌকাটি টেকনাফে পৌঁছায়ছবি: Abdur Rahman/DW

জান্তা বাহিনী আরাকান আর্মির পাশাপাশি রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেও অভিযোগ চালাচ্ছে অভিযোগ করে লুইন বলেন, ‘‘বেসামরিক মানুষেরা যদি কোথাও নিরাপত্তা না পান, তাহলে শেষ চেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করতে পারেন৷''

শনিবার শাহপরী দ্বীপে রোহিঙ্গা নৌকা ভেড়ার বিষয়ে জানতে বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ 

উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মিয়ানমার অংশে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশেও গুলিগোলা গিয়ে পড়ে৷ এতে দুই ব্যক্তি নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন৷ পাশাপাশি তিন শতাধিক মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী, সেনা ও সাধারণ মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷

তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ৷ পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আর কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার৷