গুয়ান্তানামো কারাগারের এক দশক পূর্তি
১১ জানুয়ারি ২০১২কিউবার ভূখণ্ডের একফালি এলাকা গুয়ান্তানামো৷ সেখানেই মার্কিন নৌসেনা ঘাঁটি৷ ২০০২ সালের ১১ই জানুয়ারি সেখানে চালু হয়েছিল ‘ক্যাম্প ফাইভ', যা গুয়ান্তানামো কারাগার নামে কুখ্যাত৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখা এই কারাগারের দায়িত্বে রয়েছে৷ এখনো সেখানে ১৭১ জন কারাবন্দি রয়েছে৷ বিনা অভিযোগে কোনো মানুষকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা, আইনজীবী বা আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার এই নীতি অ্যামেরিকা সহ গোটা বিশ্বে চরম বিতর্কিত৷ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ'এর যুক্তি ছিল, এরা সাধারণ যুদ্ধবন্দি নয়৷ আল কায়েদার সদস্য বা বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে এরা আফগানিস্তান বা অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল৷ এরা প্রকৃত অর্থে কোনো দেশের সেনাবাহিনীর সদস্য না হওয়ার কারণে এদের ক্ষেত্রে জেনিভা কনভেনশন বা অন্য কোনো আইন খাটে না৷ বিপজ্জনক এই সব বন্দিদের মুক্তি দিলে তারা আবার সন্ত্রাসবাদের পথে ফিরে যেতে পারে৷ তাছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখাও জরুরি৷
গত এক দশকে কমপক্ষে ৭৮০ জন বন্দিকে গুয়ান্তানামোয় সময় কাটাতে হয়েছে৷ যে ১২ জন শুরু থেকে সেখানে রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ১ জনের বিচার হয়েছে৷ বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় বারাক ওবামা এক বছরের মধ্যে এই কারাগার বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন৷ গণতন্ত্রের পূজারী ওয়াশিংটনের জন্য গুয়ান্তানামো যে একটা কলঙ্ক, সেই বাস্তব সত্য তিনি উপলব্ধি করেছিলেন৷ কিন্তু শুধু তাঁর ভাবনায় কাজ হয় নি৷ নানা বাধার মুখে ওবামা আজও এই কারাগার বন্ধ করে সব বন্দিদের বিচার বা তাদের বেকসুর খালাস করতে পারেন নি৷ শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে তিনি বুশ'এর পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন৷ ওবামা প্রশাসন ঘোষণা করেছে, গুয়ান্তানামোর বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে আদালতে পেশ করা বা মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়৷ ফলে তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানেই থেকে যেতে হবে৷ এমনকি গত ডিসেম্বর মাসে ওবামা বিতর্কিত একটি আইনে নিজের স্বাক্ষর দিয়েছেন, যার আওতায় আল কায়েদা বা তার সহযোগী সংগঠনের সদস্য সন্দেহে সামরিক বাহিনী যে কোনো ব্যক্তিকে আটক করতে পারে৷ তবে ওবামার আমলে নতুন করে গুয়ান্তানামোয় কোনো বন্দিকে পাঠানো হয় নি৷ সমালোচকরা বলে চলেছেন, গুয়ান্তানামোর অস্তিত্বের কারণেই আল কায়েদা নতুন উদ্যমে আরও সদস্য আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক