‘গৃহকর্মে শিশুদের না বলুন’
১২ জুন ২০১৩এদিকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৫ সালের মধ্যেও শিশু শ্রম দূর হবে না৷
মরিয়মের বয়স মাত্র ১১ বছর৷ সে ধানমন্ডির একটি বাসায় কাজ করে দু'বছর আগে থেকে৷ তার গ্রামের বাড়ি রংপুর৷ তারা পাঁচ ভাই-বোন৷ অভাবের সংসারে ঠিকমতো খাবার না পেয়ে তার বাবাই তাকে তার মামার সঙ্গে পাঠিয়ে দেয় ঢাকায়৷ মামা রিকশা চালান৷ তিনি মরিয়মকে পাঠান বাসার কাজ করতে৷
বাসায় মরিয়মকে কাপড়-চোপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা, থালা-বাসন ধোয়া, এমনকি রান্না-বান্নার কাজও করতে হয়৷ এছাড়া ঘরের সবাই যখন বাইরে যান, তখন মরিয়মকে থাকতে হয় তালাবদ্ধ৷ মাঝে মাঝে তাকে মারধরও করা হয়৷ গৃহকর্তা প্রতিমাসে কিছু টাকা দেয় তার মামার হাতে৷ সেই টাকা গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়৷ গত দু'বছরে মরিয়ম একবারও গ্রামের বাড়ি যেতে পারেনি৷ তারা বাবা দু'বার এসে তাকে দেখে গেছেন৷ বাবাকে তার কষ্টের কথা বলেছে মরিয়ম৷ কিন্তু জবাবে বাবা বলেছেন যে, তবু তো দু'বেলা খাবার পাচ্ছে সে৷ গ্রামের বাড়িতে যে তাও নেই৷
এরকম অসংখ্য মরিয়ম আছে বাংলাদেশে৷ আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট শিশু শ্রমিক প্রায় ৩২ লাখ৷ তাদের মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত৷ আর গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৭৫ ভাগই হলো কন্যা শিশু৷ এছাড়া, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার শিশু শুধু রাজধানী ঢাকাতে কাজ করে৷
বিশ্ব শিশু শ্রম বিরোধী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘গৃহকর্মে শিশুদের না বলুন'৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো এই যে, বাংলাদেশে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে৷ তাদের বয়স ৯ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে৷ স্বেচ্ছাবেবী সংগঠন পিএসটিসি-র শিশু শ্রম নিরোধ প্রকল্পের পরিচালক শান্তিরঞ্জন সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য৷ আর দরিদ্র পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের খাবার জোটাতে পারেন না মা-বাবা'রা৷ তাই তাদের গৃহকর্মে পাঠান৷ বাংলাদেশে শিশু শ্রম বিরোধী আইনের কারণে এখন নানা ধরণের শিল্প কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ অনেকেটা কমে যাওয়ায়, তারা গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত হচ্ছে৷ আবার বয়স বাড়লে এই কন্যা শিশুরাই পোশাক কারাখানায় কাজ নেয়৷
তিনি জানান, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা নানা ধরণের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ মেয়ে, এমনকি ছেলে শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ তিনি বলেন, এই শিশুদের ৫০ ভাগের বয়স ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে৷ তাদের দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷ তাদের মাসের বেতন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা৷
বাংলাদেশ ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম দূর করারর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ডয়চে ভেলেকে জানান যে, শুধু গৃহকর্ম নয়, শিশুরা আরো নানা ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ সরকার চায় শিশুশ্রম দূর করতে৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিও যে বিবেচনা করতে হবে৷ যেখানে খাবারই জোটেনা অনেকের, সেখানে তাকে শ্রম থেকে বিরত রাখা যায় কিভাবে? তাই তিনি মনে করেন, ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে শিশুশ্রম দূর করা কোনোভাবেই যাবে না৷
শান্তিরঞ্জন সরকার বলেন, বাংলাদেশের শিশুরা এখনো লেদ মেশিন ও ট্যানারির মতো ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পে কাজ করছে৷ যা তাদের জীবনী শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে৷ তারা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল রোগে৷ তবে তিনি মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে৷ আগের তুলনায় শিল্প কারখানায় শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার কমে এসেছে অনেকটাই৷