গোটা বাড়ি যখন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
১০ জুলাই ২০১৭স্থপতি রল্ফ ডিশ এক অভিনব বাড়ি নির্মাণ করেছেন৷ বাড়িটি দিনে একবার নিজের অক্ষের উপর পুরো ঘুরে যায়৷ ফলে সবসময়েই সূর্যের দিকে মুখ থাকে সেই বাড়ির৷ ফলে সেটি চাহিদার তুলনায় চার গুণ বেশি জ্বালানি উৎপাদন করে৷
গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই তিনি স্থপতি হিসেবে সৌরশক্তি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন৷ অনেক সমালোচক তাঁর স্বপ্নকে অবাস্তব মনে করতেন৷ কিন্তু মডেল বাড়ি তৈরি করে তিনি হাতেনাতে প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে সেটা সত্যি সম্ভব৷ তিনি বলেন, ‘‘নিজেই কিছু করে দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলাম৷ অন্যের জন্য নির্মাণের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে নিজের জন্য বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আরও ঝুঁকি নেওয়া যায়৷ পরীক্ষামূলক বাড়ি হিসেবে আমরা হেলিওট্রপ তৈরি করেছি৷ পরিবেশ সহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উন্নতির চেষ্টা করেছি৷''
সমালোচকদের মুখ এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে৷ কারণ ফ্রাইবুর্গ শহরে ৬০টি বাড়ি নিয়ে একটা আস্ত সৌর বসতি তৈরি হয়েছে৷ প্রত্যেকটি বাড়িই জ্বালানি উৎপাদন করে৷ ছাদে সোলার প্যানেলের সাহায্যে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়৷ অভিনব স্থাপত্য ও দক্ষিণমুখী অবস্থানের কারণে বাড়িগুলি গরম রাখার জন্য মাত্র এক-পঞ্চমাংশ জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ এমনকি একটা গোটা বাণিজ্যিক ভবনও ‘প্লাস এনার্জি হাউস' হয়ে উঠেছে৷ একেবারে নতুন ধরনের বহির্কাঠামোর ফলে এটা সম্ভব হয়েছে৷
ভ্যাকুয়াম প্লেট দিয়ে বাইরের দেওয়াল মুড়ে দেওয়া হয়েছে, যার ইনসুলেশন ক্ষমতার ফলে বেশি উত্তাপ প্রবেশ করতে পারে না৷ তাছাড়া এটি প্রচলিত উপকরণের তুলনায় এক দশমাংশ পাতলা৷ বাড়ির রঙিন খোলসের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য৷ এক অভিনব ভেন্টিলেশন সিস্টেমের দৌলতে ইলেকট্রিক শক্তিচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনই হয় না৷ রাতে শীতল বাতাস ভেতরে প্রবেশ করে৷ দিনের বেলায় ব্যবহৃত বাতাস বাইরে বার করে দেওয়া হয়৷ এক রেকিউপারেটর গ্রীষ্মে বাতাস শীতল করে এবং শীতে উত্তাপ দেয়৷
ভিন্ন ধরনের বসতির স্বপ্নের মাধ্যমে রল্ফ ডিশ এক নতুন ধারার ভাবনাচিন্তার জন্ম দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শহর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা আগে আমাকে পাগল বলতেন, পরে আমার ভাবনা বাস্তবায়ন করার পর পাগল হিসেবে আমাকে যেন মেনে নেওয়া হলো৷ তারপর আমাকে পথপ্রদর্শক বলা হলো৷ এখন প্রশ্ন হলো, এবার আমাকে কি তাহলে বিশেষজ্ঞ বলা হবে?''
রল্ফ ডিশ একাই সৌরশক্তি ব্যবহার করছেন না৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় সৌর গবেষণা কেন্দ্রও ফ্রাইবুর্গ শহরে অবস্থিত৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের ইঞ্জিনিয়াররা সৌরশক্তি নিয়ে মৌলিক গবেষণা করছেন৷ তাঁরা প্রোটোটাইপ তৈরি করছেন এবং বাড়ির নতুন বহির্কাঠামো তৈরি করছেন৷ তাঁদেরই একজন পদার্থবিদ টিলমান কুন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির বাইরের অংশকেও সৌরশক্তি সংগ্রহের কাজে লাগানো আমাদের লক্ষ্য৷ তাই আমরা নতুন মাল্টিফাংকশানাল সোলার এলিমেন্ট তৈরি করছি, যার সাহায্যে সেখানে সৌরশক্তি উৎপাদন করা যাবে৷''
সর্বশেষ আইডিয়া হলো আংশিক স্বচ্ছ জানালার কাচ তৈরি করা, যার মধ্যে সোলার প্যানেল বসানো থাকবে৷ অথচ সেই জানালা দিয়ে বিনা বাধায় বাইরের দৃশ্য দেখা যাবে৷ বিশেষ ধরনের পর্দার সাহায্যে সেই কাচ একদিকে রোদের তাপ প্রতিরোধ করবে, অন্যদিকে সৌরশক্তি উৎপাদন করবে৷ বিশেষ করে বড় আকারের অফিস ভবনের জন্য এমন ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে৷