জাঁতাকলে জার্মান সোশ্যাল মিডিয়া!
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬তিন-চতুর্থাংশের বেশি জার্মান প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন৷ তাদের মধ্যে আবার ৭৫ ভাগ অন্তত একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সদস্য এবং ইন্টারনেটে যতটা সময় কাটান, তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কাটান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ৷
ইতিমধ্যেই জার্মানির ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের ৯০ শতাংশ অন্তত একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত৷ জার্মানির টপ সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক হলো ফেসবুক; তার পরেই আসছে ‘গুগল+' ও ‘জিং' (এক্সআইএনজি)৷ শেষোক্তটি হলো জার্মান ভাষার লিঙ্কডইন৷ টুইটার, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রাম-কে পাওয়া যাবে নবম, দশম ও দ্বাদশ স্থানে৷
জার্মানিতে জার্মান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি গোড়ায় বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল, যেমন স্টাডিভিজেড৷ পরে ফেসবুক প্রমুখ গ্লোবাল নেটওয়ার্কগুলি তাদের আধিপত্য বিস্তার করে৷ জার্মানিতে আজও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার মানুষদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম – অবশ্য জার্মানির জনসংখ্যাগত বিকাশ তার একটা কারণ হতে পারে৷ নাগরিকদের প্রবীণত্বের বিচারে জার্মানি ঠিক জাপানের পরে৷ জার্মানদের গড় বয়স আজ ৪৬, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তা ৩৬ এবং তুরস্কে ৩০-এর অনেক নীচে৷ কাজেই বয়স্ক জার্মানদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে অনীহা বোধগম্য৷ কিন্তু তরুণ প্রজন্মের কাছে – বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যত বাড়ছে – সোশ্যাল মিডিয়া ততই তাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠছে৷
জার্মানিতে টুইটার কোনোদিনই বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি৷ তার একটি কারণ নাকি জার্মান ভাষা৷ রুশিরা রসিকতা করে বলে, টুইটার জার্মানিতে জনপ্রিয় হবে কি করে? ১৪০টি হরফে জার্মানে দু'টির বেশি শব্দ হয় না! আজকাল দেখা যাচ্ছে, জার্মানরা ইংরেজিতে টুইট করতে শুরু করেছেন৷ ফটো ও ইমেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোয় ভাষার অতো ফ্যাচাং নেই৷ তাই ইনস্টাগ্রাম জার্মানিতে টুইটারের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়৷
জার্মানরা সাধারণভাবে সাবধানী, তাই অনেক জার্মান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম চলাফেরা করার সময় ভুয়ো নাম কিংবা আদ্যক্ষর ব্যবহার করে থাকেন৷ তবে এই অতি-সাবধানতা খানিকটা নিউ মিডিয়ার উপর প্রথাগত মিডিয়ার বিরূপতার কারণেও বটে৷ জার্মান মিডিয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে কথা উঠলেই প্রধানত ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহার স্বনির্ধারণের অধিকার, এই দু'টি বুনিয়াদি প্রসঙ্গ এসে পড়ে৷ এছাড়া আছে পাবলিক ব্রডকাস্টারদের দেশে মুনাফাখোর মার্কিন কোম্পানিদের আধিপত্য বিস্তারের ভীতি – অন্তত জার্মান মিডিয়ায় ব্যাপারটা সেইভাবেই পেশ করা হয়ে থাকে৷ জার্মানির সর্বাধিক জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘বিল্ড' পত্রিকা পর্যন্ত টুইটার বা ফেসবুক ব্যবহার না করে নানা ধরনের অ্যাপ বাজারে ছেড়েছে৷
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে জার্মান সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা দৃশ্যত অনলাইন হেট স্পিচ, অর্থাৎ ইন্টারনেটে বহিরাগত-বিদ্বেষ ও জাতিবাদি মত ও মতবাদ প্রচার, চলতি উদ্বাস্তু সংকট যাবৎ যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে ফেসবুক, টুইটার ও গুগল জার্মান সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয় যে, জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেট স্পিচ সংক্রান্ত পোস্টগুলি অপসারণ করা হবে৷ ঠিক এভাবেই গুগল-এর স্ট্রিট ভিউ নিয়ে গুগল, সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে টানাপোড়েন চলেছে বহুদিন ধরে৷
এক কথায়, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে জার্মান সরকার এতটাই রক্ষণশীল যে, তথ্য সুরক্ষা নিয়ে জনগণের দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই৷ অপরদিকে ইন্টারনেটের যুগে নমনীয় না হয়ে সরকার বা সমাজেরও কোনো উপায় নেই৷ জিন-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে স্টেম সেল গবেষণা বা সোশ্যাল মিডিয়া, জার্মানদের এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারণ করতে হবে, তারা কতদূর যাবেন অথবা যাবেন না৷ সেই দায়িত্ব কেউ তাদের কাঁধ থেকে তুলে নিতে পারবে না৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷