ঘরে বসে ঈদ পালন করুন: দিল্লির শাহী ইমাম
১৫ মে ২০২০করোনার কারণে তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলছে ভারতে। প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউনও হবে। সে ক্ষেত্রে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লকডাউন চলার সম্ভাবনা। তার মধ্যেই ঈদ। কী ভাবে হবে ঈদের উদযাপন? এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে নিজের মতামত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দিল্লির জামে মসজিদের শাহী ইমাম আহমেদ বুখারি।
শুক্রবার বুখারি সাহেব ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আপনাদের মাধ্যমে সকলকে বলছি, এ বছর ঈদের উদযাপন বাড়িতে বসে করুন। বাইরে বেরোবেন না। লকডাউন চলছে। তা ভাঙবেন না। এমনকী, আত্মীয় বন্ধুদের মুবারক জানান টেলিফোনে।'' বুখারি সাহেবের বক্তব্য, এমন সংকট বিশ্ব কখনও দেখেনি। এই প্রথম জুম্মার নামাজে মসজিদে জমায়েত হচ্ছে না। সকলে বাড়িতে থাকছেন। জুম্মার নামাজে যদি সকলে বাড়িতে থাকতে পারেন, তা হলে ঈদের নামাজেও বাড়িতে থাকা সম্ভব। সকলে নিজের নিজের মতো করে প্রার্থনা করুন। বুখারি সাহেব জানিয়েছেন, করোনার সঙ্গে সরকার লড়ছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ সহযোগিতা করছেন। জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষও মানুষকে সচেতন করছেন। এবং সে কারণেই তাঁর আবেদন, এ বারের ঈদে সকলে যেন বাড়িতেই থাকেন।
এমন ঈদ কখনও দেখেননি কেউ। ঈদের দিন সকলে বাইরে যাবেন না, এক সঙ্গে নামাজ পড়বেন না, এটা ভাবতেই পারছেন না বহু মানুষ। এ বিষয়ে কী বলছেন ইসলামিক স্কলাররা? জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক এবং জয়পুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আখতারুল ওয়াসে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আল্লাহ সর্ব শক্তিমান। সবই তাঁর সৃষ্টি। ফলে এমন পরিস্থিতিতে সকলে যে একত্রিত হয়ে নামাজ পড়তে পারবেন না, তা সর্বশক্তিমান জানেন। সকলে ঘরে বসে নিজের নিজের মতো করে প্রার্থনা করলেও কোনও দোষ হবে না। এই পরিস্থিতিতে কারও বাইরে যাওয়া উচিত নয়। জমায়েতে অংশ নেওয়া উচিত নয়। সকলে যেন তা মেনে চলেন।'' তাঁর বক্তব্য, সবার আগে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। তবেই সকলকে রক্ষা করা যাবে। সে কারণেই এ বারের ঈদ ঘরে বসে পালন করা জরুরি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ঈদের নামাজ বাড়িতে বসে কী ভাবে পড়া হবে? ভারতের আরেক বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মনজুর আলম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঈদের নামাজের সাধারণ নিয়ম হলো সকলে খোলা জায়গায় একত্রে নামাজ পড়বেন। এ বার যেহেতু তা সম্ভব নয়, ফলে বড় ঘরে অথবা বাড়ির ছাদে পরিবারের সকলকে নিয়ে নামাজ পড়া যেতে পারে। তবে ফ্ল্যাট বাড়ি হলে ছাদে না যাওয়াই ভালো। সে ক্ষেত্রে গোটা বাড়ি ছাদে চলে গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে না। নিজের বাড়ি হলে তবেই ছাদে গিয়ে নামাজ পড়া উচিত। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ঈদের বিশেষ প্রার্থনা হওয়া উচিত মানব সভ্যতার জন্য। মানব সভ্যতার যাতে উন্নতি হয়, এই কালো মেঘ যাতে দ্রুত কেটে যায়, সে কথাই উচ্চারণ করতে হবে। গরিবকে সাহায্য করা, আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানোর শপথ নিতে হবে। আখতারুল ওয়াসের সঙ্গে মনজুর সাহেবও এক মত। তাঁর বক্তব্য, এ বারের ঈদ অবশ্যই বাড়িতে বসে কাটাতে হবে। তাতে কোনও অন্যায় হবে না। তাঁর আরও পরামর্শ, ''জৌলুস কম করুন। অকারণে খরচ করবেন না। নিজের জন্য জিনিস কম কিনে গরিব মানুষকে সেই টাকায় সাহায্য করুন।''
ভারতে এ বছর ঈদের বাজারেও টান। দোকানদারদের বক্তব্য, ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। কোনও কোনও অঞ্চলে দু'একটি কাপড়ের দোকান খুললেও তাতে লোক নেই। বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। রমজানের সময় পুরনো দিল্লির যে চেহারা থাকে, এ বছর তা একেবারে আলাদা। রাস্তায় লোক অনেক কম। বাজার কার্যত বন্ধ। তবে শাহী ইমামের বক্তব্য, ঈদ আবার আসবে। আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে। আপাতত সকলের একটাই লক্ষ্য, করোনার সঙ্গে লড়াই।