‘দশভূজা’ নারী
৩০ নভেম্বর ২০১১সুসেতা চক্রবর্তী৷ কিছুটা কাশ্মীরি, কিছুটা বাঙালিয়ানা, এই দুইয়ে মিলেমিশে রয়েছেন তিনি৷ বিশ্বাস করেন কাজের সম্পূর্ণতায়৷ এবং সেইসঙ্গে মনে করেন, মেয়েরা যে কাজই করুক না কেন, তার মধ্যে কোথাও যেন তারা মিশিয়ে দেয় এক মধুরতা, যে মধুরতা চারপাশের সবকিছুকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে৷
টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রে কাজ করেন সুসেতা৷ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের লেনদেন সংক্রান্ত কাজকর্ম সামলাতে হয় তাঁকে৷ এই কাজের ক্ষেত্রে মহিলা হিসেবে আলাদা সুবিধা পাওয়া যায় বলে দাবি করলেন সুসেতা৷ তাঁর বক্তব্য, মহিলা হয়ে কাজ করতে গিয়ে কোনরকম অসুবিধে তো নয়ই, বরং কিছু সুবিধাই পেয়েছেন তিনি৷ কীরকম সুবিধা? সুসেতার উত্তর, মহিলা হওয়ার সুবাদে মানুষ হিসেবে যে সহৃদয়তা থাকে, তাতে অন্যের সঙ্গে সুব্যবহারের মাধ্যমে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধরণের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারা যায়৷ যাকিনা একজন পুরুষের ক্ষেত্রে সবসময়ে সম্ভবপর নাও হতে পারে৷ আন্তরিকতা আর স্বাচ্ছন্দ্যের দিক থেকে একজন মহিলা অনেকটা এগিয়েই থাকেন৷ আর একারণেই বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে সুসেতার বিশ্বাস, মহিলারা অনেক বেশি সফল হন এবং সহজেই হয়ে থাকেন৷
নিজের মায়ের পরিবারের দিক থেকে কাশ্মীরের সঙ্গে সম্পর্কিত সুসেতার পড়াশোনা এবং বেড়ে ওঠা সবই কলকাতায়৷ নিজেকে পুরোদস্তুর বাঙালি ভাবতেই ভালোবাসেন তিনি৷ তাঁর কথাবার্তার মধ্যে সেই বাঙালিয়ানার ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়ে৷ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক হওয়া সুসেতা এক সময়ে নাচের দিকেও মনোযোগী ছিলেন দীর্ঘদিন৷ তবে দ্রুত বিয়ে এবং পরপর দুই সন্তানের জন্ম দেওয়ায় পেশার জগত থেকে তাঁকে সরে থাকতে হয়ে বেশ অনেকদিন পর্যন্ত৷ পরে তিনি পেশায় ফিরে আসেন যখন সন্তানরা একটু বড় হয়েছে তখনই৷ গত পনেরো বছর ধরে তিনি এই পেশায় রয়েছেন এবং সাফল্যের সঙ্গেই রয়েছেন৷
ভারতের মতো দেশে মেয়েদের কি একটা সংগ্রাম করেই এগোতে হয়? এর জবাবে সুসেতা জানান, মেয়েদের নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হয় ঘরে ও বাইরে৷ দুই জায়গায় এই লড়াই আসলে এক অন্য ধাঁচের সংগ্রামের নামান্তর বলেই তাঁর বিশ্বাস৷ একটা প্রচলিত কথার উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েরা তো ঘরে বাইরে দশভূজা৷ আজকের বিপণন জগতে একথাটা খুব চালু কথা, বলেন সুসেতা৷ বাইরের কাজ করেই নিস্তার মেলেনা কোন মেয়ের৷ তার কাছে পরিবারের প্রত্যাশা তারপরেও অনেকখানি থেকে যায়৷ সুসেতা নিজের কথা বলতে গিয়ে জানান, তাঁর স্বামী চাকরিসূত্রে প্রবাসে থাকেন৷ সেক্ষেত্রে তাঁকে নিজের সন্তানদের বড় করে তোলা আর ঘর সামলানোর পাশাপাশি কাজ করে যেতে হয়েছে পুরো সময়টাই৷ তাতে কাজে লেগেছে ওই দশভূজা হওয়ার অভ্যাস৷ সুসেতার কথায়, কবে যেন তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি একদিন৷ এখন আর তা মনেও পড়ে না৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক