চট্টগ্রামে বিএনপির দুর্গে এবার আওয়ামী লীগের হানা
১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ভালো প্রার্থী সিলেকশন না হওয়া, নেতাদের মধ্যে বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে অন্তত দু'টি আসন বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী যদি দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামনে তাহলে আরো অন্তত একটি আসন বেড়ে যেতে পারে আওয়ামী লীগে৷ মেয়র এখনও দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ শুরু করেননি৷ অনেক ক্ষেত্রে তিনি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপি৷
কোতয়ালি ও বাকলিয়া নিয়ে চট্টগ্রাম-৮
চট্টগ্রাম সদর আসন বলে পরিচিত কোতয়ালি ও বাকলিয়া নিয়ে চট্টগ্রাম-৮৷ এই আসনে মহাঐক্যজাট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি৷ আর চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচন করছেন মেয়রের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত মোহাম্মদ শামসুল আলম৷ এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন মেয়র নিজেই৷ কিন্তু নির্বাচন করতে না পারার কারণে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে জোর চেষ্টাও করেন মেয়র মহিউদ্দিন৷ তাতে সফল না হওয়ায় বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চারদলীয় জোট থেকে শামসুল আলমকে মনোনয়ন এনে দেন৷ শামসুল আলমের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও বিএনপিতে তিনি নতুন৷ অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ দানশীল ধনাঢ্য শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বিএসসির রাজনীতিতে সুনাম রয়েছে৷ গত ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছে হেরে যান আওয়ামী লীগের এমএ মান্নান৷ ফলে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা মনে করছেন৷
অবশ্য শামসুল আলমকে কোতয়ালির নিজ আসনটি ছেড়ে দিলেও মেয়র মহিউদ্দিনের সহযোগিতায় পাশের আসনে নিজের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান৷
চট্টগ্রাম-৯ (ডবলমুরিং)
চট্টগ্রাম-৯ (ডবলমুরিং) আসনে মহাঐক্যজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম৷ আর মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মেয়রের ঘনিষ্ঠজন ও আওয়ামী লীগ নেতা আফছারুল আমীন৷ গত সোমবার লালখানে আফছারুল আমীনের নির্বাচনী অফিসের উদ্বোধন করে তার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছেন মেয়র মহিউদ্দিন৷ এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়রের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার মোহাম্মদ মনজুর আলম (মঞ্জু)৷ ফলে মহাঐক্যজোটের তিন প্রার্থীর মধ্যে চলবে ভোট কাটাকাটি৷ আর তারই মাঝ দিয়ে পার হয়ে যাবেন হয়ত বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান৷ এসবই হয়েছে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে 'মামা-ভাগ্নে' বলে পরিচিত মেয়র মহিউদ্দিন ও আবদুল্লাহ আল নোমানের পরিকল্পিত উদ্যোগে৷ মেয়রের ইচ্ছায় শামসুল আলমকে সদর আসনে মনোনয়ন এনে দিয়েছেন নোমান৷ আর তার প্রতিদান হিসেবে নোমানের নির্বাচনে জয়ের সব ব্যবস্থাই করেছেন মেয়র মহিউদ্দিন৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির আমীর খসরুর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আফসারুল আমিন৷
চট্টগ্রাম-৭ (চানগাঁও-বোয়ালখালী)
চট্টগ্রাম-৭ (চানগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে মহাঐক্যজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল৷ ভালো লোক হিসেবে পরিচিত থাকলেও নিজের এই এলাকার সঙ্গে খুব একটা সম্পৃক্ততা নেই তার৷ তার প্রতিপক্ষ চারদলীয় জোট প্রার্থী ধনাঢ্য গার্মেন্ট মালিক এরশাদ উল্লাহ৷ তাঁর অর্থবল আছে৷ তাই প্রচারণায় এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে পেরে উঠছেন না মইন উদ্দিন খান বাদল৷ তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের এই আসনে বড় প্রভাব রয়েছে৷ নিজের এই আসনটিতে মোরশেদ খানের পরিবারের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চেয়েও কেউ পাননি৷ ফলে মোরশেদ খান চাচ্ছেন না তার এই আসন থেকে বিএনপির আর কোন নেতা উঠে আসুক৷ প্রশ্ন, ভেতরে ভেতরে তিনি কি বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ? দলীয় এই কোন্দলের সুবিধা পাচ্ছে মহাঐক্যজোটের প্রার্থীরা৷ তবে মইন উদ্দিন খান বাদলকে জিততে হলে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রকাশ্যে জোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে হবে৷ ফলে জটিল হয়ে পড়েছে এখানকার ভোটের হিসাব৷ এলাকার সাধারণ ভোটাররা বলেছেন, ভালো লোক না টাকার জয় হয়, তা এখন দেখার অপেক্ষা৷ গত নির্বাচনে বিএনপির মোরশেদ খানের কাছে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ৷
বন্দর ও পতেঙ্গা নিয়ে চট্টগ্রাম-১০
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সদরের আরেকটি আসন বন্দর ও পতেঙ্গা নিয়ে চট্টগ্রাম-১০৷ এবার নতুন হয়েছে এই আসনটি৷ এখানে চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷ আর মহাঐক্যজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ৷ দীর্ঘদিন আবদুল লতিফ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে৷ তাই এলাকায় এখনও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি তিনি৷ পাশাপাশি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর টাকাও আছে, আছে রাজনৈতিক ইমেজও৷ ফলে এখানকার নির্বাচন অনেকটাই তার জন্য সহজ হয়েছে৷ বন্দর এলাকার ভোট আওয়ামী লীগের- এমনটি জনশ্রুতি আছে৷ তবে তার জন্য মেয়র মহিউদ্দিনকে প্রকাশ্যে নামতে হবে৷
অনেকে বলেছেন, শ্রমিকদের ভোট আওয়ামী লীগের নয়, মেয়র মহিউদ্দিনের৷ তিনি যাকে দিতে বলবেন শ্রমিকরা তাকেই ভোট দেবে৷ তবে এখনও প্রকাশ্যে নামেননি মেয়র৷ শেষ পর্যন্ত মেয়রকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো গেলে ভোটের মাঠের হিসাব উল্টেও যেতে পারে৷